Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

ওবিসি তালিকা বিতর্ক: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে এনসিবিসির প্রশ্নবাণ ভূমিকা

 

আর বিপ্লব

 

পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি (অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণি) তালিকা ঘিরে আবারও বিতর্কের আগুন জ্বলছে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের ওবিসি তালিকা থেকে ৭৬টি জাতিকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর, গোটা বিষয়টি নতুন মোড় নেয়। এরই মধ্যে জাতীয় পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কমিশন (NCBC) রাজ্য সরকারের নবগঠিত ওবিসি তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ৩ দিনের মধ্যে জরিপ তথ্য ও রাজ্য প্যানেলের সুপারিশ চেয়ে পাঠিয়েছে।

২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় তালিকায় ৮৭টি নতুন জাতি, যার মধ্যে প্রায় ৮০টি মুসলিম সম্প্রদায়ের, অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেয়। এর ভিত্তিতে রাজ্য তাদের ওবিসি তালিকা আপডেট করে। তবে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই সংঘাতের শুরু। বিজেপি দাবি তোলে, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস মুসলিম তোষণের রাজনীতি করছে, যেটি সংবিধান বিরুদ্ধ।

এর প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৩ সালে ১১৩টি জাতিকে ওবিসি তালিকা থেকে বাদ দেয়, শুধুমাত্র ৬৬টি জাতিকে স্বীকৃতি দেয়। এই রায় অগ্রাহ্য করে চলতি বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার আবারও ৭৬টি জাতিকে নতুন করে ওবিসি তালিকায় যুক্ত করে, ফলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪০।

এই সিদ্ধান্তের পরই জাতীয় পিছিয়ে পড়া শ্রেণি কমিশন হস্তক্ষেপ করে। এনসিবিসি চেয়ারম্যান হংসরাজ গঙ্গারাম আহির জানান, পূর্বে কমিশন যে তথ্য চেয়েছিল, তা রাজ্য সরকার দেয়নি। এখন নতুন তালিকার ভিত্তিতে রাজ্য কি জরিপ চালিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কমিশন বলছে, ১৩(সি), ১৩(ডি), এবং ১৯(এ) ধারায় যেসব তথ্য জরুরি— যেমন, পেশাগত পরিসংখ্যান, কতজন সরকারি চাকরিতে রয়েছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি— তা কমিশনের কাছে জমা পড়েনি।

এনসিবিসি জানায়, "এই তথ্য ছাড়া তালিকাভুক্তি করা হলে সংরক্ষণ নীতির অপব্যবহার হতে পারে।" তারা তিন দিনের মধ্যে সমস্ত জরিপ প্রতিবেদন, রাজ্য প্যানেলের সুপারিশ, এবং সমর্থক দলিল চেয়ে পাঠিয়েছে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এনসিবিসি তার ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গে করা মাঠপর্যায়ের পরিদর্শনে দেখতে পায় যে কিছু রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অভিবাসী ওবিসি শংসাপত্র পেয়েছেন এবং সংরক্ষণ সুবিধা ভোগ করেছেন। এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আইনি দিক থেকে অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন তুলে দেয়।

কমিশনের মতে, এধরনের অবৈধ অন্তর্ভুক্তি রাজ্যের ওবিসি নীতির বাস্তবায়নে গলদ তুলে ধরে। রাজ্য সরকার এই বিষয়টি অস্বীকার করলেও, এনসিবিসি বলছে, তাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা যথাযথ জরিপের ভিত্তিতে ওবিসি তালিকা তৈরি করেছে। সরকারের মতে, একটি বিস্তারিত সমীক্ষা করা হয়েছিল এবং তাতেই ভিত্তি করেই নতুন জাতিগুলিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কমিশন বলছে, এই তথ্য যদি সত্যি থাকে, তবে তা আগে কেন তাদের দেওয়া হয়নি?

আহির স্পষ্ট করে বলেন, "রাজ্য সরকার যদি জরিপ চালিয়ে থাকে, তবে তা কমিশনকে আগে জানানো উচিত ছিল। অথচ এমন কোনও তথ্য আমরা আগে পাইনি। এখন হঠাৎ এতগুলি জাতি যুক্ত করায় সন্দেহ তৈরি হয়েছে।"

এই ওবিসি বিতর্ক নিছক প্রশাসনিক নয়, এর গভীরে রয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। বিজেপি বারবার রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে। তাদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের ১৫(৪) এবং ১৬(৪) ধারার অপব্যবহার।

তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, পিছিয়ে পড়া সমস্ত জনগোষ্ঠী, ধর্ম নির্বিশেষে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার। সংরক্ষণ নীতি সেই বৈষম্য দূর করতেই প্রয়োগ করা হয়েছে।

যেহেতু কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই ১১৩টি জাতির অন্তর্ভুক্তিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে, তাই রাজ্য সরকারের নতুন তালিকা আবারও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। রাজ্যের ওবিসি তালিকা এখন সুপ্রিম কোর্টে গড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল।

অন্যদিকে, এনসিবিসি যদি রাজ্যের দেওয়া তথ্য ও দলিলকে অপর্যাপ্ত বলে বিবেচনা করে, তবে তারা নিজস্ব সুপারিশ কেন্দ্রীয় সরকারে পাঠাতে পারে, যা রাজ্য সরকারের তালিকার বৈধতা প্রশ্নের মুখে ফেলবে।

ওবিসি তালিকা ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের এই বিতর্ক শুধুই একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটি সংরক্ষণ নীতির ন্যায্যতা, সাংবিধানিক রূপরেখা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে। জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি হলেও, যদি তা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তবে তার পরিণাম মারাত্মক হতে পারে।

এখন সকলের নজর এনসিবিসি-র সিদ্ধান্ত ও রাজ্য সরকারের জবাবের দিকে। আগামী কয়েকদিনে স্পষ্ট হবে, পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোবে।

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon