ADVT

বাংলাদেশ  হিন্দু শূন্য হওয়ার পিছনে দায়ভার কার


বটু কৃষ্ণ হালদার

আমরা সবাই জানি বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে কয়েক লক্ষ বাঙালি তাজা তাজা রক্ত ঝরে ছিল। এমনকি তৎকালীন ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে বহু ভারতীয় সৈনিকও মারা গিয়েছিল। বর্তমানে সেই দেশে হিন্দুশূন্য করার চক্রান্ত চলছে। তবে এই চক্রান্ত প্রায় সফল হওয়ার পথে। যেভাবে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয় তাতে মানবিকতার চোখে জল এলেলেও এক শ্রেণীর অসভ্যরা হায়নার হাসি হেসে চলেছে দিনরাত। তবে এর দায়ভার হাসিনা সরকারকে নিতে হবে।

বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে নানান জল্পনা চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার সামনাসামনি সাক্ষাতে নানান সমস্যার কথা উঠে আসছে। বিভিন্ন সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা হীনতার কথা। কিন্তু তাতে তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা অত্যন্ত নিরাপদে আছেন। শেখ হাসিনার এই আশ্বাসে সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায় কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।কারণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা তার আমলে একেবারেই নিরাপদ নন,সেই বিষয়টা বারবার স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে মূল আলোচ্য বিষয় যাওয়ার আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দু-চার কথা না বললেই,বিষয়টা পরিষ্কার হবে না।

১৯৪৬ সালে রক্ত ক্ষয় দাঙ্গার মধ্য দিয়ে ভারত পাকিস্তান জন্ম নিলেও পূর্ববঙ্গ মানে ( বর্তমান বাংলাদেশ ) ছিল পাকিস্তানের অংশ। সেই পূর্ব বঙ্গে বাংলা ভাষা প্রিয় বাঙালিরদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হল উর্দু ভাষা। প্রাণের প্রিয় বাংলা ভাষার এই অপমান বাঙালিরা মেনে নিতে পারেনি। এর ফলে বাঙ্গালীদের উপর শুরু হয় পাকিস্তানি জিহাদীদের শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার।পূর্ববঙ্গ কে পাকিস্তানীরা কবরস্থান বানিয়ে ফেলেছিল।পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত হতে, বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন।অকথ্য,অত্যাচার,নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে বাঙালি হিন্দুরাই যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিল।সেই বাঙ্গালীদের কপালে জুটে ছিল শুধু অত্যাচার-নিপীড়ন আর বঞ্চনা।১৯৪৭সালে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই পূর্ব পাকিস্তানের তথা পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক দল নেতাদের পাকিস্তান শাসকদের পূর্ববঙ্গের প্রতি বিমাত্রি সুলভ আচরণের জন্য পাকিস্তান প্রীতির' মোহভঙ্গ ঘটে। স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় দিবস দীর্ঘ ইতিহাস।ইতিহাস সৃষ্টি পিছনে রয়েছে তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের হিন্দু জনগোষ্ঠীর গৌরবের ইতিহাস অপমান বঞ্চনার করুন ইতিহাস। সেই হিন্দু নিধনের নিশংস ইতিহাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পাতায় একটুকু আঁচড় কাটেনি। পূর্ব পশ্চিমের কোন বাংলা সাহিত্যের নাটকের সিনেমায় এই ইতিহাস স্থান পাইনি।এপার ওপার কোন বাংলার রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে উঠে আসেনি, বাঙালি হিন্দু নিধনের সেই করুন কাহিনী।রাজনৈতিক সেমিনার সভা-সমাবেশে আলোচনা বা চর্চার বিষয় হয়ে ওঠেনি,এমনকি চায়ের কাপে ঝড় তোলেনি। যেটা ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যে হিন্দুরা নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিয়েছিল সেই বঞ্চনা ও অবহেলার  ইতিহাস। যে হিন্দুদের অবদান ছিল সবথেকে বেশি সেই হিন্দুরা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রতিদান হিসাবে পেয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। তৎকালীন পাকিস্তান আন্দোলনের যুবনেতা কুখ্যাত সোরাবউদ্দিনের ভাব শিষ্য শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগ ত্যাগ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ রাজনৈতিক দল তৈরি করেন এবং পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কারণ ইতিমধ্যে পাকিস্তানের শাসক গণ ঘোষণা করেন যে, পূর্ববঙ্গের মাতৃভাষা হবে উর্দু। বাংলা ভাষা প্রিয় আপামর বাঙালিরা মেনে নিতে পারেনি এই সিদ্ধান্ত।উর্দু নয় বাংলা হবে পূর্ববঙ্গে রাষ্ট্রভাষা এই দাবিতে পাকিস্তানের সংসদের প্রথম প্রতিবাদে সোচ্চার হোন পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য বাঙালি হিন্দু নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।।এমত অবস্থায় ১৯৬৯ সালের গণভোটের দাবিতে গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরুপ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি।যার মধ্যে হিন্দুরা ছিল ২৭ শতাংশ।ভোট ছিল প্রায় ৩ কোটি,ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় দুই কোটি।একশ শতাংশ ভোট পেয়ে শেখ মুজিবর আওয়ামী লীগ ১৬০ টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হতে সক্ষম হয়েছিল। আর এটাই ছিল হিন্দুদেের প্রতি পাকিস্তানের অন্যতম গাত্রদাহের কারণ।হিসাব অনুযায়ী বাঙালি হিন্দু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ক্ষমতায়নে ক্যাটালিস্ট হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন।বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক জনসভায় বাংলাদেশের দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেয়। যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ হিসাবে রূপ নেয়। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম কে স্তব্ধ করতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী হিন্দু বাঙালিদের ওপর লেলিয়ে দেয়, পুনরায় শুরু করে অগ্নিসংযোগ,ধ্বংসযজ্ঞ গণহত্যা। এই গণহত্যা য় রাজনীতিবিদ,বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক,ডাক্তার সাংবাদিক ব্যবসায়ী সমাজসেবী ছাত্র-যুব,শিশু,নারী পুরুষ কেউ রেহাই পেল না।

তৎকালীন পাকিস্তানী জেনরেল ইয়াহিয়ার হিন্দু নিধনের পক্ষে যুক্তি ছিল যে, পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ বাঙালি হিন্দু। এরা ইসলাম বিরোধী। এরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় তারা পরাজিত হয়েছেন।"ভবিষ্যতে শাসন কায়েম রাখতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে থাকা হিন্দু বাঙালিদের স্রেফ ছেঁটে ফেলা দরকার” বলে মন্তব্য করেন ইয়াহিয়া।

এর পর সোনার বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও হিন্দুদের ঘটি বাটি মাটি ছাড়তে হয়েছিল সে কথা কারো অজানা নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বার বার সরকার পরিবর্তন হলে ও হিন্দুদের নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে কেউ চিন্তা করে নি। যে সরকারের প্রতি বাংলাদেশের জনগণ সব থেকে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করেছিল সেই শেখ হাসিনার আমলের সব থেকে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হিন্দুদের অবাধে হত্যা করা হচ্ছে, হিন্দু নারীরা ধর্ষিত হচ্ছেন, তাদের সম্পত্তি জবরদখল করা চলছে, সুপরিকল্পিতভাবে হিন্দু শিক্ষক ও শিক্ষিত সমাজকেই বারবার হেনস্তা ও অপদস্ত করা হচ্ছে। বারবার হিন্দু মন্দির দেব-দেবী মূর্তি প্যান্ডেল ভাঙ্গা হচ্ছে। হিন্দু সন্ন্যাসীদের হত্যা করা হচ্ছে।এ প্রসঙ্গে কয়েকটি জীবন্ত উদাহরণ দেওয়া যেতেই পারে।২০১৯ সালে বাংলাদেশে ৩১ হাজার  হিন্দু  নির্যাতন করা হয়েছে।১৫৩ টি মন্দিরে হামলা,২৪৬ টি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়।২০২১ সালে কুমিল্লায় দূর্গা পূজার সময়, হনুমানের হাতে কোরআন শরীফ রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বসত প্যান্ডেল ভাঙচুরের সাথে সাথে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়। যে ঘটনায় জড়িত ছিল ইকবাল নামক এক ব্যক্তি।তাকে পাগল বলে সেই ঘটনাটা কে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় প্রায় শূন্যের পথে।এ ঘটনা তো কারো অজানা নয়। আবার বাংলাদেশের সংবিধান বর্তমান সময়ে সংখ্যাগুরু ও উগ্রবাদীদের অঙ্গুলি হেলানে কান ধরে উঠবস করে।এরপরেও বলবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা খুবই নিরাপদে আছেন।দিনে দিনে বাংলাদেশ উগ্রবাদীদের দখলে চলে যাচ্ছে।শেখ হাসিনা সরকার প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে তাদের মত দিয়ে যাচ্ছেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। শেখ হাসিনা সরকার হিন্দুদের নিরাপত্তার কথা বললেও তাদের অন্যায় ভাবে অত্যাচার করা হলেও সেই কান্না তিনি শুনতে পান না। এক কথায় বলতে গেলে শেখ হাসিনা সরকার কার্যত উগ্রবাদীদের কাঠ-পুতুলে পরিণত হয়েছে। তিনি যতই ভারতে এসে সাফাই গাইবার চেষ্টা করুক না কেন,হিন্দু নিরাপত্তার কথা তার কাছে মিথ্যা ভাষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(CLOSE) #days=(02)

আলোচনা করুন, আলোচনায় থাকুন। এখানে টাচ করে দেখে নিন, কীভাবে লেখা মেল করবেন। আপনার আলোচনা তুলে ধরুন পাঠকের সামনে।
Accept !