ADVT

হিন্দু ঐতিহ্য,সংস্কৃতি,মন্দির,মূর্তির ঐতিহ্য বিপন্ন পশ্চিমবাংলায়


বটু কৃষ্ণ হালদার

ভারত বিখ্যাত ঐতিহাসিক ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার হিন্দুধর্ম সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করেছেন যে:_

"আগে পাশ্চাত্যের সভ্য জাতিগুলি হিন্দু ধর্মকে অত্যন্ত হেয় করে দেখত। তারা মনে করত হিন্দু ধর্ম কুসংস্কার, দুরাচার, নীতিহীন, লোকাচারের সমষ্টি মাত্র। তাই প্রগতিশীল জগতে হিন্দু ধর্ম কোনরকম গুরুত্ব পাবার দাবি রাখতে পারেনা। চিকাগোতে আয়োজিত ধর্ম সভায় স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মের স্বপক্ষে বক্তৃতা করে, বিশ্বসংস্কৃতির আধুনিক মানচিত্রে সেদিন তিনি হিন্দু ধর্মের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, কি বিশ্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মকে তারা অত্যন্ত উঁচু আসন দিতে বাধ্য হয়েছিল"। সেই হিন্দু ধর্মের অস্তিত্ব এই বাংলায় আজ বিপন্ন তা বোধ হয় কারো অজানা নয়। 

সমগ্র বিশ্বের জীবন্ত দলিলের নাম হোল ইতিহাস।ইতিহাসকে উপেক্ষা করার মত দুঃসাহস এখনও কারো হয় নি।ইতিহাস বলছে সমগ্র বিশ্ব তে হিন্দু ধর্মের অস্তিত্ব আছে।হিন্দু সংখ্যা লঘু হয়েও বহু দেশে তাদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করছে সেই দেশের সরকার। মুসলিম সংখ্যা গুরুর দেশ ইন্দোনেশিয়াতে বিশ্বের বড় সরস্বতী মন্দির আছে,নিজের ধর্মের গুরুত্ব বোঝাতে তারা হিন্দু ধর্ম ধর্মাবলম্বীদের আঘাত করে না।মন্দির, মূর্তি ভেঙে ফেলার ইতিহাস লেখে নি।সেই দেশের টাকাতে গণেশর মূর্তি বর্তমান।আবার  বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশ থেকে আজ হিন্দুধর্ম বিলুপ্ত।এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে,আফগানিস্তানের কাবুল শহরটা বানিয়ে ছিলেন শ্রী রামের পুত্র কুশ ,কিন্তু আজ সেখানে একটি হিন্দু মন্দির নেই ।গান্ধার শহরটির নাম আমরা মহাভারত তথা ইতিহাসে পেয়েছি ,যারা রানী ছিল গান্ধারী। বর্তমানে সেই স্থানের নাম কান্দাহার ।সেখানে আজ কোন বাঙালি সত্ত্বার চিহ্ন মাত্র নেই ।কম্বোডিয়ার রাজা সূর্যদেব নির্মাণ করেছিলেন আঙ্কোরভাট মন্দির, সেখানে আজ বাঙালি ভাষা চেতনা বিলুপ্ত ঘটেছে। আফগানিস্তান দেশের কথা একটু ভাবুন। যে দেশে মুসলমানরাই সুরক্ষিত নয় সে দেশের হিন্দুদের কি অবস্থা হতে পারে তা বোধ হয় সহজে বোধগম্য হওয়ার বিষয়। লক ডাউনের পরে আমরা দেখেছি আফগানিস্তান দেশের নৃশংসতা ও ভয়াবহতার চিত্র। আমেরিকান সৈন্য আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর সমগ্র বিশ্ব দেখেছে অসভ্য বর্বরদের তাণ্ডব। একের পর এক হিন্দু স্থাপত্য শিল্পকলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানব বোমা বিস্ফোরণে সৌধ স্মৃতি শিল্প ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত,আহত হয়েছে দেশের মুসলিম নাগরিক সহ অন্যান্য ধর্মের বহু জনগণ সেই সঙ্গে বাদ যায়নি ছোট ছোট শিশুরা। পাশবিক অত্যাচার ও ধ্বংসললায় মেতে উঠেছিল আফগানিস্তান। বর্তমান আধুনিক সময়ও একশ্রেণীর অসভ্য বর্বররা নিজেদের ধার্মিক ও মানুষ বলে পরিচয় দেয় যারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাধারণ নিরীহ জনগণকে রক্তাক্ত করে আনন্দ পায়।হায়নার হাসি হাসে। যা আধুনিক সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ভয়ংকর বার্তা। ইরাক ইরানের কথা বা নাইবা বললাম।

বর্তমান সময়ে পাকিস্তান ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের কথা ভাবুন।স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের প্রায় ২৪ শতাংশ হিন্দু ছিল। বর্তমানে সেই পাকিস্তানে এক শতাংশ হিন্দু আছে কিনা সন্দেহ। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসটা পড়লে বুঝতে পারা যায় যে হিন্দুদের একাংশ যে বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা আনতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন সেই দেশ বর্তমানে হিন্দু শূন্য হওয়ার পথে।বাংলাদেশও পাকিস্তানের পথে চলছে। যে দেশে স্বাধীনতার পরে ৩৩ শতাংশ হিন্দু ছিল সেই দেশে বর্তমান হিন্দুদের সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশ। এই বাংলাদেশের একশ্রেণীর বর্বর জনগণ বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে। তার জন্য লাগাতার হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণের উপর চলছে নির্মম অত্যাচার, হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে, হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, হিন্দু নারীদেরকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করা হচ্ছে ধর্ম পরিবর্তন করা হচ্ছে তাদের জায়গা জমি বলপূর্বক দখল করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হিন্দু জনজাতি বাংলাদেশ সরকারের নিয়তির দরজায় মাথা ঠুকছে কিন্তু সেই দেশের সরকার নির্বিকার নীরব দর্শক। বাংলাদেশ সরকারের এই নীরবতা প্রমাণ করে দেয় যে হিন্দু শূন্য হওয়ার জন্য পরোক্ষভাবে সম্পূর্ণরূপে মদত রয়েছে।

বর্তমানে পাকিস্তান বাংলাদেশের এই অপসংস্কৃতির ঢেউ বইছে ভারতবর্ষের অন্যতম রাজ্য পশ্চিমবাংলায়।

গত কয়েক বছর পরিসংখ্যান তথ্য অনুযায়ী মালদহ,মুর্শিদাবাদ,হুগলি,হাওড়া,ধুলাগড়,কলকাতার খিদিরপুর,মেটিয়াবুরুজ,টেংরা এলাকা, উত্তর ২৪ পরগনা দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ পশ্চিমবাংলার বহু জেলায় হিন্দু জনজাতি বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। হিন্দু ধর্মের মানুষ খুন হচ্ছে মহিলারা ধর্ষিত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে মন্দির মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। তাতে পশ্চিম বাংলার রাজ্য সরকার নিরব দর্শকের ভূমিকা অবতীর্ণ। তবে বলা ভালো এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন। কারণ ভোট পরবর্তী হিংসায় আমরা দেখেছি এই পশ্চিমবাংলার বহু জায়গায় মুসলিম সম্প্রদায়ের হাত ধরে বহু হিন্দুদের ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে দেওয়া লুটপাট অত্যাচার চালানো হয়েছে।,মূর্তি,মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে।এই ঘটনা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? আবার ২৯ শে জুলাই মহররমের দিন তাজিয়া বের হয়। সেদিন আমরা এই পশ্চিমবাংলা র বহু জায়গায় দেখলাম ধর্মীয় তাজিয়া বের হবার দরুন প্রশাসনের তরফ থেকে মন্দিরগুলো ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবাংলার কোন জায়গায় দেখেছেন হিন্দুদের রাম নবমীর দিন মিছিল বের হলে মসজিদ ঢেকে দেওয়া হয়েছে? এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় র‍্যালির ভয়ে অন্য ধর্মকে এই বাংলায় ভয় পেতে হয় এর পরেও বলবেন পশ্চিমবাংলায় হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন নয়? তবে হিন্দুদের ভয় পেলে চলবে না। জোটবদ্ধ হয়ে একে অপরের সঙ্গে হিসাবে বসবাস করতে হবে। বর্তমান সরকারের চোখে হিন্দুদের জীবনের কোন দাম নেই তা বারবার প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। জোটবদ্ধ ভাবে বসবাস না করলে ১৯৪৬ সালের মতো বে ঘো রে জীবন দিতে হবে। ১৯৪৬ সালে হিন্দু ধর্মের অস্তিত্বকে বহু নারীর শাখা সিঁদুর ও শিশুদের জীবন,বাঁচিয়ে রাখার নায়ক গোপাল মুখার্জি বর্তমানে আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই।এখন সময় হয়েছে সকল হিন্দু যুবকদের নিজেকে গোপাল মুখার্জি তে  রূপান্তরিত করার,নাহলে আজকে একজন দুজন কালকে শয়ে শয়ে হিন্দু যুবক মারা যাবে, ঘর থেকে টেনে নিয়ে যাবে মা বোনেদের।সে দিনের থেকে বেশি দূরে নেই বাংলা। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(CLOSE) #days=(02)

আলোচনা করুন, আলোচনায় থাকুন। এখানে টাচ করে দেখে নিন, কীভাবে লেখা মেল করবেন। আপনার আলোচনা তুলে ধরুন পাঠকের সামনে।
Accept !