ADVT

নেহেরু জন্মদিন পালনের সঙ্গে শিশু দিবসের কোন সম্পর্ক নেই


বটুকৃষ্ণ হালদার

১৪ই নভেম্বর শিশু দিবস পালন করা হয় ভারত জুড়ে।কিন্তু যে মানুষটা শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছিল তার জন্মদিন কেন শিশু দিবস পালন করা হয় তা আজও বোধগম্য হোল না।

স্বাধীন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং শেখ আব্দুল্লাহ সাবেক কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী এদের তিনজনের মধ্যে একটা নিগূঢ় মিল ছিল তা হল উল্লেখিত তিনজনের মায়েদের স্বামী ছিলেন একজন যাঁর নাম মতিলাল নেহেরু। জিন্নাহর মা হলেন মতিলালের চতুর্থ স্ত্রী। আব্দুল্লাহ মতিলালের পঞ্চম স্ত্রী  র সন্তান।ঠিক তেমন ভাবে মতিলাল জহর লালের সৎ পিতা। ভাবতে খুব অবাক লাগছে তাইনা, হ্যাঁ এটাই সত্যি। যে নির্মম সত্য আড়াল করে রাখা হয়েছে যুগের পর যুগ। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জহরলাল নেহেরুর মায়ের নাম ছিল থুসু রহমান বাই।তাঁর পিতার নাম ছিল মোবারক আলী। তবে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, তাহলে মতিলাল নেহেরু ও জহরলাল নেহেরুর মধ্যে সম্পর্ক কি? জহরলাল নেহেরুর পিতা মোবারক আলীর মৃত্যুর পরে থুসু রহমান এর দ্বিতীয় স্বামী হলেন মতিলাল নেহেরু। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে,এই মতিলাল নেহেরু কে?

এই মতিলাল নেহেরু মোবারক আলীর কর্মচারী হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। মোবারক আলীর মৃত্যুর পর থুসু রহমান মতিলাল নেহেরু কে বিবাহ করেন। 

তাই মতিলাল নেহেরুর ছিলেন জহরলাল নেহেরুর সৎপিতা,মায়ের দিক থেকে।কিন্তু জহরলাল নেহেরু কাশ্মীরি পন্ডিত হলেন কিভাবে? কারণ তাঁর পিতা এবং মাতা উভয়েই মুসলমান ছিলেন। তবে কি সৎ বাবা মতিলাল নেহেরুর থেকেই এই পদবী পাওয়া? কিন্তু মতিলাল নেহেরু নিজেই কাশ্মীরি পন্ডিত ছিলেন না। এক্ষেত্রে জেনে নেওয়া দরকার মতিলাল নেহেরুর বংশ পরিচয়। মতিলাল নেহেরুর পিতা যমুনা খানের (নাহের) গিয়াস উদ্দিন গাজী ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের পরে দিল্লি ছেড়ে কাশ্মীরে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে গঙ্গাধর নেহেরু (নেহরি থেকে নেহেরু হয়ে ওঠেন) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ পণ্ডিত  নামের সামনে রাখলে লোকেরা জাত জিজ্ঞাসা করতেন না। মাথায় পণ্ডিতি টুপি নিয়ে পন্ডিত গঙ্গাধর নেহেরু এলাহাবাদে চলে আসেন। তাহার পুত্র মতিলাল নেহেরু আইন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করে একটি আইন সংস্থায় কাজ শুরু করেন। আবার আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পিতা ছিলেন জহরলাল নেহেরু ছিলেন একজন মুসলমান এবং কমলা কৌর নেহেরু ছিলেন একজন কাশ্মীরি পন্ডিত।আবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বাবা ছিলেন জাহাঙ্গীর ফিরোজ খান (পার্শিয়ান মুসলিম), এবং মা ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু ওরফে মুমিনা বেগম খান। ইন্দিরা গান্ধী ওরফে মুমিনা বেগম খান যিনি জাহাঙ্গীর ফিরোজ খানের স্ত্রী ছিলেন, পরে মোহনদাস গান্ধীর পরামর্শে তার নাম পরিবর্তন করে গান্ধী রাখেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়, নেহেরু কে বাঁচাতে ফিরোজ খান কে গান্ধী দত্তক পুত্র হিসেবে নিয়ে ফিরোজ গান্ধী তে পরিণত করেছিলেন। আরো একটু তথ্য সংযোজন করা দরকার, তা হলো সঞ্জয় গান্ধীর নাম ছিল সঞ্জীব গান্ধী। ইংল্যান্ডে পড়ার সময় উনি একটি গাড়ি চুরির মামলায় অভিযুক্ত হন। এবং পাসপোর্টটা পুলিশ নিয়ে নেয় পরে নাম পরিবর্তন করে দেশে ফেরত আসেন।

জহরলাল নেহেরু, ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক বিশ্ববন্দিত নাম।দেশের অনেকেই তাঁকে ভগবান রুপে পূজা করেন।অথচ স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন, দেশের সর্বনাশের বীজ বপন করে চলেছিলেন তাকেও বুঝতে পারেনি। আমরা সবাই অবগত ব্রিটিশরা ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এসেছিলেন।অথচ মুষ্টিমেয় কিছু ব্রিটিশদের হাতেই চলে যায় দেশের লাগাম।দেশের মাটিতে ভারতবাসীরা হয়ে যায় পরভূমি।এতে কি শুধুমাত্র ব্রিটিশদের দোষ?কখনোই না। দেশের একশ্রেণীর স্বার্থবাদী রাজনৈতিক নেতারা শুধুমাত্র নিজেরা ভালো থাকার জন্য অর্থের লোভে নিজেদের বিবেক মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিয়েছিল।ব্রিটিশদের তোষামোদ,দালালি করে দেশের লাগামটা তাদের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করেছিল।তার বিনিময়ে পেয়েছিল অর্থ,প্রতিপত্তি,নাম,যশ।ব্রিটিশদের  সাহায্য করার জন্য অর্থ ধনসম্পত্তি সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই পেয়েছিলেন "রায় বাহাদুর" খেতাব। অনেকেই ভাবতেন স্বাধীনতার কি দরকার এইতো আমরা বেশ আছি।অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে কওয়া খাচ্ছি। আবার কেউ কেউ ভাবতেন হয়তো একদিন দেশ স্বাধীন হবে, আর স্বাধীনতার পরে তিনি হবেন দেশের একমাত্র মালিক। সেই সমস্ত ক্ষমতার লোভী ও স্বার্থপর মানুষের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন জহরলাল নেহেরু। অচিরেই ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের ইতিহাস লিখে চলে ছিলেন।জহরলাল নেহেরুর সমকালীন ভারতবর্ষের অন্যতম সন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের প্রতি তাঁর বিরূপ ধারণা বারবার প্রকাশ পেয়েছে।নেতাজির তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল নেহেরুর ভীতি প্রদর্শনের অন্যতম কারণ।কারণ নেহেরু জানতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যদি ভারতবর্ষে থাকেন তাহলে দেশের লাগাম তার হাতে কখনোই উঠবে না।তাই প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে তিনি বারবার নেতাজির পিছন থেকে ছুরি মারার চেষ্টা করেছিলেন। মহান নেতা সুভাষচন্দ্র বোসের ভারত ত্যাগ থেকে শুরু করে অন্তর্ধান হওয়া রহস্য, এমনকি জাপানের তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার খবর পর্যন্ত কোথাও না কোথাও নেহেরুর হাত রয়েছেন বলে বহু গবেষক থেকে ঐতিহাসিক মনে করেন। নেতাজির অন্তর্ধধান নেহেরু কে অবিচলতা,ভীত প্রদর্শন থেকে কিছুটা শান্ত করেছিলেন।তবে স্বাধীনতার পরে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন অন্যতম মহান রাজনীতিবিদ ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কারণ জহরলাল নেহেরু যখন এক বিশেষ শ্রেণীকে চরম এবং চূড়ান্ত সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা করে চলেছিলেন।সেটা ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে ছিল খামখেয়ালী পনা। তাঁর খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধচারণ করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সেটা তিনি মনে প্রাণে মেনে নিতে পারেনি, ঠিক যেমনভাবে হজম করতে পারেনি নেতাজির জনপ্রিয়তা। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের মতোই দ্বিতীয়বার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হত্যাকাণ্ডের রহস্য আজও উদঘাটন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।জহরলাল নেহেরু মত স্বার্থপর নেতারা ছিল বলেই কিন্তু দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে রচনা হয়েছিল বিপ্লবীদের রক্ত দিয়ে। এমনকি বহু মহান বিপ্লবীর ফাঁসি কিংবা হত্যার পিছনে ও ছিল ভারতবর্ষের অন্যতম রাজনীতিবিদ,ওরফে সবার প্রিয় যিনি "চাচা নেহেরু" নামে পরিচিত।তাঁর অংগুলি হেলনে বহু মহান বিপ্লবীর ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে।দেশের নিঃস্বার্থ মানুষ গুলোর সাথে ছলনা ময়ীর খেলা খেলা অনেকেই খেলেছিলেন অথচ বদনাম হয়ে রইল মীরজাফর একা।

১৯৪৭সালের মিরপুর গণহত্যা ছিল ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা যেখানে ২৫,000 জনের মধ্যে ১৮,000 হিন্দু এবং শিখকে গণহত্যা করা হয়েছিল এবং প্রায় 3,500 জন আহত হয়েছিল। মিরপুরে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল যা এখন পোক অকুপাইড কাশ্মীরের (পিওকে)। এটি ২৫ নভেম্বর, ১৯৪৭-এ ভারতের স্বাধীনতার পরে ঘটেছিল। সেই সময়ে, জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দুঃখের বিষয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি ২৫,০০০ হিন্দু ও শিখদের বাঁচাতে কিছু করেননি। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে উদ্ধার অভিযানে পাঠাননি। আমাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মিরপুরে পাঠানো হলে ২৫ হাজার হিন্দু ও শিখ হত্যার হাত থেকে রক্ষা পেত। কিন্তু তার অবহেলায় ১৯৪৭ সালের ২৫ নভেম্বর মিরপুর গণহত্যা হয়।

কথিত আছে যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কাশ্মীরে পাঠানো হলেও কাশ্মীরের একীভূতকরণ নিয়ে বিরোধের কারণে তাদের মিরপুরে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি। যতই বিবাদ চলুক না কেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর দায়িত্ব ছিল মিরপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঠানো এবং হিন্দুদের ভারতে ফিরিয়ে আনা। 25,000 হিন্দুর জীবন যেকোন বিবাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি ছিল প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সবচেয়ে বড় ভুল। তার একটি ভুল জঘন্যতম গণহত্যার দিকে নিয়ে যায়। জানি না কেন অনেক ভারতীয় এখনও এই সত্য সম্পর্কে সচেতন নয়।


চলুন জেনে নিই গণহত্যার কাহিনী:

ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তির সময়, মিরপুরও কাশ্মীর রাজ্যের একটি অংশ ছিল। সে সময় পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে হাজার হাজার হিন্দু মিরপুরে চলে যাচ্ছিল এবং মুসলমানরা মিরপুর থেকে পাকিস্তানে চলে যাচ্ছিল। তারপর, পাকিস্তান সেনাবাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে আক্রমণ করার জন্য একটি সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করে। সামরিক অভিযানের কোড-নাম ছিল "অপারেশন গুলমার্গ", যা ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী দ্বারা সহায়তা ও নির্দেশিত ছিল বলে বলা হয়। কাশ্মীর যুদ্ধের আগে, মিরপুর জেলায় হিন্দু ও শিখ ছিল প্রচুর। তাদের অধিকাংশই মিরপুরে বসবাস করত। ১৯৪৭ সালের ২৫ নভেম্বর সকালে হানাদাররা শহরে প্রবেশ করে এবং শহরের বেশ কয়েকটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিরপুরে ২৫ হাজারেরও বেশি হিন্দু ও শিখ আটকা পড়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার মধ্যে, মাত্র ২,000 হিন্দু এবং ২,000 রাজ্য সৈন্যদের সাথে জম্মুতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। যাইহোক, হিন্দু ও শিখরা শেখ আবদুল্লাহর কাছে তাদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছিল কিন্তু তিনি তাদের অনুরোধে কর্ণপাত করেননি এবং সমস্ত হিন্দুকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার জন্য অসহায় রেখেছিলেন। হানাদাররা পথে হাজার হাজার হিন্দু ও শিখকে হত্যা করে এবং পাঁচ হাজার নারীকে অপহরণ করে। হিন্দু ও শিখ নারীদের ধর্ষণ ও অপহরণ করা হয়। ধর্ষণ ও অপহরণ এড়াতে হানাদারদের হাতে পড়ার আগেই কূপে পড়ে আত্মহত্যা করেছে অনেক নারী। অনেক পুরুষ আত্মহত্যাও করেছে। মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২0,000 এর বেশি।

একদিকে হাজার হাজার হিন্দু-শিখকে হত্যা করা হচ্ছিল এবং নারীদের ধর্ষন করা হচ্ছিল, অন্যদিকে সমস্ত মুসলমানরা বিনা হতাহত পাকিস্তানে চলে যায়। এরপর হিন্দু ও শিখদের ধ্বংস ও হত্যার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মন্দির ও গুরুদ্বার গুঁড়িয়ে দেয়। তারা সহজে মিরপুর জেলাকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। যাইহোক, আরএসএস এবং অন্যান্য সংগঠনগুলি বাকী শিখ এবং হিন্দুদের নিরাপদে জম্মুতে ফিরিয়ে আনতে পদাতিক সৈনিক হিসাবে সাহায্য করেছিল। পুরাতন মন্দির ও গুরুদ্বার ধ্বংস করা হয়েছে। আজ এই অঞ্চলে হিন্দু ও শিখ জনগোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বিশ্বাস করুন বা না করুন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী 'জওহরলাল নেহেরু' এই জঘন্যতম গণহত্যার জন্য দায়ী ছিলেন। কারণ ভারতীয় সেনাবাহিনী মিরপুর জেলায় প্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং আমরা জানি যে ভারতীয় সেনাবাহিনী সমস্ত হিন্দু এবং শিখদের ১০০ শতাংশ বাঁচাতে পারে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ঢুকতে দেননি।

স্বাধীনতার পরেও তিনি বিন্দুমাত্র দেশের কথা ভাবেননি। দেশের মানুষ কষ্টে,অনাহারে,অভুক্ত থাকলেও নিজের সুখ,স্বাচ্ছন্দ,আনন্দ,ফুর্তিতে ছিলেন অবিচল।দিন রাত বিভিন্ন পার্টিতে যোগদান করে মহাভুরিভোজ থেকে বিরত থাকতেন না, তেমনি দেশের রাজকোষ শূন্য করে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে বেড়াতেন এমন প্রমাণ বহুবার পাওয়া যায় বিভিন্ন তথ্য থেকে।এমন মহান দেশপ্রেমিকের চরম ভুলে ভারতবর্ষের ফুটবল বিশ্বের গণ্ডি স্পর্শ করতে পারল না আজও। কারণ শুরুতেই ফুটবলের মাজা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন জহরলাল নেহেরু। প্রায় ১৩০ কোটির দেশ ভারতবর্ষের ফুটবলার এশিয়ার গণ্ডি টপকে বিশ্ব ফুটবলে আজ পর্যন্ত পা রাখতে পারল না। তবে এক্ষেত্রে দোষ অবশ্যই ভারতবর্ষের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ তৎকালীন মহান দেশ সেবকদের। স্বাধীন ভারতে ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দল খেলার অনুমতি পায়।কিন্তু এতই দুর্ভাগ্য যে স্বাধীন ভারতের ফুটবল টিমের কাছে জুতো কেনার পয়সা ছিল না।কিছু খেলোয়াড় মোজা এবং বাকিরা খালি পায়ে খেলেছিল।। ভারতের প্রথম ম্যাচ ফ্রান্সের সাথে ছিল। কিন্তু ফ্রান্সের ফুটবলাররা কেউ খালিপায়ে খেলেননি। ভারতীয় ফুটবল টিমের প্রদর্শনী খুশি হয়ে দর্শকরা স্ট্যান্ডিং ওভেশন দিয়েছিলেন।এরপরেও মহাসুযোগ এসেছিল ব্রাজিল ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে। ভারত ওয়ার্ল্ড কাপ বিশ্বকাপ খেলা তে কোয়ালিফাই করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতীয় টিমকে ব্রাজিলে পাঠাতে অনুমতি দেয়নি ভারত সরকার। সরকার পক্ষ থেকে দেশের মানুষকে বলা হয়েছিল ফিফা খালি পায়ে খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা লাগিয়েছে।আর ফিফাকে বলা হয়েছিল ভারত বর্ষ গরিব দেশ তাই ব্রাজিল পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তাদের কাছে নেই। কিন্তু ফিফা জানিয়েছিল যে তারা ভারতের মতো প্রতিভাবান টিম এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করুক। তাই তারা ভারতীয় টিমের আসা যাওয়া থাকা খাওয়া সব খরচ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। তবুও ভারত সরকার ভারতীয় ফুটবল দলকে খেলতে পাঠায়নি। তখন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সরকারের অধীনে ছিল।বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেও অংশগ্রহণ করতে না পেরে টিমের মনোবল একেবারে ভেঙে যায় এবং এরপর থেকে আজ পর্যন্ত আর ভারতবর্ষের বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। আগামী ভবিষ্যতের সেই সুযোগ পাবে কিনা তাও কারো জানা নেই। তবে এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো যে সরকা রের কাছে ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য জুতো কেনার পাশে ছিল না সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী দৈনিক পোশাক প্যারিস থেকে ড্রাই ক্লিন হয়ে আসতো। নেহেরুজি,র প্রেমিকা এড বিনাকে লেখা চিঠি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে করে যেত। বুঝতে পারছেন,যিনি ভারতবর্ষের ফুটবলের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন তার নামে শিশু দিবস পালন করা হয়। আরো আশ্চর্যের বিষয় আজ ভারতের সাতটা ফুটবল স্টেডিয়াম এর মধ্যে তিনটি নাম জহরলাল নেহেরু নামে। আর একটি নেহেরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর নামে।সেই সময়ে ভারতীয় টিমের ক্যাপ্টেন শৈলেন্দ্রনাথ মান্না বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ক্যাপ্টেন এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন। কিছু বছর পর তিনি ভারতীয় ফুটবলের সাথে হওয়া এই প্রতারণার কথা জানিয়েছিলেন।এই হলো ভারত বর্ষের ফুটবলের ইতিহাস।এসব নিয়ে আজ আমরা কেউ মাতামাতি করি না,বা ভাবার সময় কারো নেই।

দেশকে স্বাধীন করতে জাত ধর্ম নির্বিশেষে এই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন দেশের মানুষ। তবে একথা অনস্বীকার্য যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্নি স্ফুলিঙ্গের প্রধান স্থান হল পশ্চিমবাংলা।আর তাতে অবশ্যই বাঙালি হিন্দুদের অবদান ভুলে যাওয়ার কথা নয়। সব থেকে বেশি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও শহীদ হয়েছিলেন বাংলার মানুষ। দেশের সর্ব ধর্মের মানুষ স্বাধীনতা অংশগ্রহণ করলেও স্বাধীনতার পুরস্কার স্বরূপ মুসলমানদের জন্য আলাদা দেশ গঠন করা হলো।যার নাম হল পাকিস্তান।তাও আবার হিন্দুদের রক্ত দিয়ে যে দেশের মানচিত্র পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। এক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল।কিন্তু স্বাধীনতা ইতিহাসে যাদের অবদান সব থেকে বেশি সেই হিন্দুরা কি পেয়েছিল? পাকিস্তান গঠন হলেও হিন্দুস্তান গঠন হয়নি, ভারত বর্ষ সর্বধর্ম সমন্বয়ের দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।এটা কি দেশবাসীর সঙ্গে বেইমানি করা নয়?আর তাতে ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের কফিনের শেষ পেরেক প্রথা হয়েছিল,তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না। মুসলমানরা আলাদা দেশ পেলেও হিন্দুদের ভারতবর্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার পূর্ণ ব্যবস্থা তিনি করে চলেছিলেন ভিতরে ভিতরে।নেহেরু হিন্দুদের এদেশে "দ্বিতীয় শ্রেণী"র নাগরিক বানানোর জন্য হিন্দু_কোড_বিল আনার প্রচণ্ড চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সর্দার প্যাটেল নেহেরুকে বলেছিলেন যে যদি এই বিল আনা হয় তাহলে তিনি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেবেন আর হিন্দুদের নিয়ে পথে নামবেন। সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের হুংকারে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। তবে ভিতরে ভিতরে তিনি ষড়যন্ত্র করেই রেখেছিলেন। যে আগুন কখনোই নেভানোর ছিল না।তাই সর্দার প্যাটেল -এর মৃত্যুর পর নেহেরু "হিন্দু কোড বিল" সংসদে পাস করেছিলেন, সংসদে এই বিলের চর্চার সময় আচার্য জেপি ক্রিপালন নেহেরুকে "সাম্প্রদায়িক" এবং "মুসলিম পন্থি" বলেছিলেন,উনি বলেছিলেন "আপনি হিন্দুদের ধোঁকা দেবার জন্য পৈতে পরেন, নাহলে আপনার মধ্যে হিন্দু হবার এতটুকুও লক্ষন নেই"..."যদি আপনি প্রকৃতই ধর্মনিরপেক্ষ হতেন তাহলে হিন্দু কোড বিল এর বদলে সব ধর্মের জন্য ইউনিফর্ম সিভিল কোড বিল আনতেন"।

ইনি সেই সেই রাজনীতিবিদ ছিলেন যাঁর জন্যে বহু বিপ্লবীদের ফাঁসি হয়েছিল।নেতাজি সুভাষ বোস দেশ ছাড়তে বাধ্য করানো হয়েছিল, তিনি যাতে এই ভারতবর্ষে আর না পা রাখতে পারেন তার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা করেছিলেন। বিদেশের মাটিতেও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস একমাত্র জনপ্রিয় জননেতা ছিলেন তিনি যদি ভারতে ফিরে আসেন তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রধান দাবিদার ছিলেন।নেতাজিকে তিনি যুদ্ধ অপরাধী ঘোষণা করেছিলেন। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য তে ও তিনি হয়তো প্রত্যক্ষ না হলে পরোক্ষভাবে সম্পূর্ণরূপে যুক্ত ছিলেন সে সত্য আগামী ভবিষ্যতে অবশ্যই সামনে আসবে, তা নিয়ে দেশবাসী আশাবাদী।

তিনি আরও অনেক ভুল করেছিলেন যার কুফল আজও ভোগ করে চলেছে ভারতবাসী।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(CLOSE) #days=(02)

আলোচনা করুন, আলোচনায় থাকুন। এখানে টাচ করে দেখে নিন, কীভাবে লেখা মেল করবেন। আপনার আলোচনা তুলে ধরুন পাঠকের সামনে।
Accept !