ADVT

জাতির জনক হওয়ার মতো কোনো আদর্শই গান্ধীর মধ্যে ছিল না

বটুকৃষ্ণ হালদার

কংগ্রেসের উৎপত্তি অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম্ এর হাত ধরে এবং প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশদেরকে বিপ্লবীদের চোরাগোপ্তা আক্রমনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অর্থাৎ ঘুরিয়ে বললে ব্রিটিশদের দালাল হিসেবে,যার জন্য নেতাজির মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিক কংগ্রেসে অবহেলিত ছিলেন।আর বিশ্বের সফলতম ভন্ড দেশ প্রেমিকের জন্মদিন জাতীয় ছুটির দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী; ২রা অক্টোবর ১৮৬৯ সালে গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম করম চাঁদ

উত্তম চাঁদ গান্ধী,মাতার নাম পুতলি বাই গান্ধী।গান্ধী ছিলেন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। এছাড়াও তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

মহাত্মাগান্ধী ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে মহাত্মা অর্থাৎ (মহান আত্মা) এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত। ভারত সরকার সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে।২রা অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। ২০০৭ সালের ১৫ই  জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ এ দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে।তবে প্রশ্ন তিনি কতটা স্বচ্ছতা,অহিংসা,র প্রতীক ছিলেন তা একটু জেনে রাখা ভালো।

আমরা সর্বদা পড়ে এসেছি,মহাত্মা গান্ধীজী একজন ব্যারিস্টার ছিলেন। তখন থেকেই ভাবতাম যে উনি নিশ্চয়ই অনেক শিক্ষিত, অনেক জ্ঞানী। পরে জানতে পারলাম যে গান্ধীজী তাঁর সারাজীবনে একটিই মাত্র শিক্ষাগত সার্টিফিকেট অর্জন করতে পেরেছিলেন, তা হল ম্যাট্রিক পাসের সার্টিফিকেট। ১৮৮৭ সালে গান্ধীজী টেনেটুনে কোনমতে থার্ড ডিভিশনে ম্যাট্রিক পাশ করেন।তখনকার দিনে ব্যারিস্টার হতে হলে কোন পরীক্ষাই দিতে হতো না, কিছুদিন কোন বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ ব্যারিস্টারের সহকারী হিসেবে কাজ করলেই ব্যারিস্টার হিসেবে বার এসোসিয়েশনের সদস্য হওয়া যেতো। কিন্তু এই সহকারী হওয়ার জন্যও গান্ধীজীর ভারতীয় সার্টিফিকেট এবং তার ফলাফল গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি, এ জন্য গান্ধীজীকে আবার লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসতে হয়। প্রথম বার সেই পরীক্ষায় ফেল করার পর গান্ধীজী দ্বিতীয় বারে কোনমতে পরীক্ষায় পাশ করতে সক্ষম হন এবং একজন ব্যারিস্টারের সহকারী হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করেন। তখনকার যুগের অনেক মানুষেরই প্রথাগত শিক্ষা খুব বেশি থাকতো না, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তাঁরা ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু গান্ধীজীর আচরণে এটা স্পষ্ট হয় যে তাঁর মধ্যে সেই স্বশিক্ষা ছিল না।

সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে মহাত্মা গান্ধী স্বচ্ছতার শান্তি ও অহিংসার প্রতীক।একজন যুক্তিবাদী ও আইনজ্ঞ বটে। বিশ্ব কথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে তিনি একজন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত।যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে আমরা তাই পড়ে আসছি। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা দরকার ১৯১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে মহাত্মা গান্ধী বলে কোন নামের অস্তিত্ব ছিলনা। অথচ এর পরবর্তীতে তিনি ভারতবর্ষের মাস্টারমাইন্ড ও চালক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। এক কথায় বলতে গেলে তিনি ভারতবর্ষের প্রধান কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন।১৯০৫ সালে বাংলা ভাগের চক্রান্ত তে উত্তাল দেশ,১৯০৮ সালে ক্ষুদিরামের ফাঁসি,১৯১২ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ এর উপর বোমা নিক্ষেপ করার ফলে ব্রিটিশরা অপরাধীদের ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন,চারিদিকে বিপ্লবীদের নামে পোস্টার পড়তে শুরু করে,এ সময় চলছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি ঠিক সেই ভারতের রাজনীতিতে আবিষ্কার হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।  কে এই মহাত্মা গান্ধী হঠাৎ করে তিনি ভারতবর্ষে আমদানি হলেন একটু জেনে নেওয়া দরকার। তিনি ভারতে আসার পর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতে নেতাজী সুভাষ বসুর মনঃপুত হল না।সেই কথা তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস কে বললেন_"গান্ধীজীর সমস্ত ভাষা ছিল আদো আদো কোন কিছু পরিষ্কারভাবে তিনি বলতে চাননি, দেশবাসীর জন্য অন্তরের ডাক ইত্যাদি ইত্যাদি যেসব কথা বললেন তা বেশিরভাগ অস্বচ্ছতায় ভরা, কিন্তু আমি আপনাকে দেখে এসেছি,আপনি যা নির্দেশ দেবেন তা আমি পালন করতে রাজি আছি"।এবার আসা যাক গান্ধীর আফ্রিকায় কিছু কর্মকাণ্ডের কথায়।আমরা জানি তিনি আফ্রিকায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের উপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। তৎকালীন সময়ে আফ্রিকার আইনে সেখানকার অধিবাসী দের সঙ্গে ভারতবাসীদের আলাদা চোখে দেখা হতো না। তাই তিনি ভারতবাসীদের জন্য আলাদা কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে থাকেন। এই চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি ব্রিটিশদের সহচর হয়ে যান। এদিকে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হতে থাকে। এই সময়ে আফ্রিকায় বুয়োর নামে এক উপজাতি বসবাস করত। তা কিছুতেই ব্রিটিশ দাসত্ব স্বীকার করে নিতে চাইছিলেন না। তারা আন্দোলনের পথে পা বাড়িয়েছি লেন। মহাত্মা গান্ধী সেই সুযোগটা কাজে লাগায়।আফ্রিকায় বসবাসকারী সমস্ত ভারতীয় দের মিলিত করে তাদেরকে নিয়ে ব্রিটিশদের অনুচরে পরিণত হয়। তিনি ব্রিটিশ কাউন্সি লে গিয়ে তার অনুভূতির কথা জানায়, যে এই উপজাতি দমনে সশস্ত্র সেনাদলে নাম লেখাতে চায়। কিন্তু বাধ সাধল তার রুগ্ন শরীর। তাতেও কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। যোগ দিলেন ব্রিটিশ মেডিকেল ভ্যান টিমে। অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে যারা আহত ও নিহত হয়ে পড়বেন তাদেরকে সেই ভ্যানে করে তুলে নিয়ে ব্যারাকে ফিরে আসতে হবে। সেই রেজিমেন্টে অবশেষে তিনি যোগ দিলেন।

মহাত্মা গান্ধীর জন্ম হয়েছিল গুজরাটে।তাই তিনি ছিলেন নিরামিষভোজী। আর মুখে ছিল অহিংসার বাণী। কিন্তু তিনি ব্রিটিশ রেজিমেন্টের যে দলে যোগদান করেছিলেন সেখানে অহিংসা নয় হিংসার বাণী প্রচলিত ছিল।ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে আফ্রিকা সেই উপজাতি পুরো ধ্বংস হয়ে যায়। এক কথায় বলতে গেলে সেই উপজাতির বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই।মহাত্মা গান্ধী ছিলেন সেই রক্তাক্ত ইতিহাসের একজন জলজ্যান্ত প্রমাণ।আর মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের অনুসারী হিসেবে সহযোগিতা করার জন্য তাঁকে"কাইজার-এ-হিন্দ উপাধি" দেওয়া হয়। এই কাইজার শব্দটির অর্থ হলো জার্মানির  স্বৈরাচারী অত্যাচারী সম্রাটের প্রতীক।মুখে অহিংসার ললিত বাণী গান্ধীজিকে ব্রিটিশরা হিংসার অনুসারী রূপে ব্রিটিশরা চিহ্নিত করেন। এবং পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে তাকে দাবার চালের ঘুঁটি হিসাবে প্রেরণ করেন। সেই দাবার চাল ভারতবর্ষের প্রধান মাথা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ইতিহাস পড়ে মনে প্রানে বুঝতে পেরেছি যে স্বাধীনতা কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর আগে আসার সেই স্বাধীনতা এলো বহু বছর পর। তার অঙ্গুলিহেলনে ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ এর মত বীর সন্তানদের ফাঁসি হয়েছিল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দেশসেরা কে দেশ ছাড়া হতে হয়েছিল।মনেপ্রাণে একথা অস্বীকার করার উপায় আমাদের আজ কারো নেই। একদিকে স্বাধীনতা আনতে দেশের সন্তানেরা যখন মৃত্যুবরণ করছে ঠিক উল্টোদিকে সবার মণিকোঠায় স্থান করে নিচ্ছে মহাত্মা গান্ধী। সবথেকে লজ্জার বিষয় আজ অফিস,ঘাট কোট,কাচারি,আইন-আদালত সমস্ত জায়গায় গান্ধীর ছবি টাঙিয়ে রাখা হয়। তাকে ভগবানের মতো পূজা করে এক শ্রেণীর মানুষ।অথচ যে মানুষ গুলো জীবনের সমস্ত সুখ ঐশ্বর্যবিসর্জন দিয়ে দেশ সেবায় নিয়োজিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে তাদের সম্বন্ধে ইতিহাস বা কতটুকু তথ্য দেয়,বলতে পারেন কেউ?

গান্ধী পৃথিবীর সব চেয়ে সফল ভন্ড

গান্ধীজী বলতেন, “একজন সত্যাগ্রহী সব সময় আক্রমণকারীর দ্বারা নিহত হবার কামনা করবে, কিন্তু কাউকে হত্যা করার কামনা করবে না।” 

নেতাজী বলেছিলেন, “বৃটিশের নির্দেশে গান্ধীজী যখনই কোন আন্দোলন তুলে নিতেন, তখনই তিনি নিজের শয়তানীকে চাপা দেওয়ার জন্য বা দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য অনশন শুরু করতেন।” গান্ধীজীর সকল প্রকার অনশন ও কারাবাস ছিল বৃটিশদের পরিকল্পনার অংশ।

ড. আম্বেদকরের মতে, “গান্ধীজী ছিলেন শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকাকালে একবার গান্ধীজী হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলামের মধ্যে তুলনা করে একটি বক্তৃতা দেন, সেই বক্তব্যে মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয় এবং ১৯০৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কয়েকজন মুসলমান তাঁর ওপর হামলা করে এবং তাঁকে প্রচণ্ড প্রহার করে। এরপর থেকেই গান্ধীজী মুসলমানদের সর্বপ্রকার সমালোচনা করা বন্ধ করে দিলেন এবং তারপর থেকেই তিনি মুসলমানদের অত্যন্ত গর্হিত অপরাধকেও অপরাধ বলে মনে করতেন না।

এর ফলাফল মুসলমান রা হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করলে হিন্দুদের কি কর্তব্য সে প্রসঙ্গে গান্ধীজী বলেছেন_"আমার বোনকে কেউ ধর্ষণ করলে আমি তার পদচুম্বন করব"। প্রসঙ্গ অনুযায়ী পাঞ্জাবের মুসলমানদের দ্বারা হিন্দু ও শিখ ধর্ষিত মহিলাদের ধর্ষণকালে কি করা উচিত সেই প্রসঙ্গে গান্ধীজী আরো বলেন_"তাদের কখনই উচিত নয় মুসলমানদের বাধা দেওয়া বরং তাদের উচিত ধর্ষণকালে নিজেদের কামড়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে মুসলমান ধর্ষণকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে চুপ করে থাকা যতক্ষণ না ক্রমাগত পৈশাচিক ধর্ষণের ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে"।মুসলমানদের কাছে বিনা বাধায় আত্মসমর্পণ করে আমৃত্যু ধর্ষণ বরণ করে নেওয়ার উপদেশ গান্ধীজী বহুবার হিন্দু মহিলাদের দিয়েছিলেন। নোয়াখালীর হিন্দু নিধনযজ্ঞের সময় তিনি হিন্দু মেয়েদের অনুরূপ উপদেশ দিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন অহিংসার প্রতীক।তবে তার সময়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক রক্তস্নান হয়ে যাওয়া বাংলার কথা একটু জানা দরকার। ১৯৪৬ সালের মার্চ থেকে জুন মাসে ক্যাবিনেট মিশন ভারতে এসেছিল। এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন লর্ড পেথিক লরেন্স।স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস এবং এভি আলেকজান্ডারের মিশনের সদস্য ছিলেন।তাঁদের পরিকল্পনা অনুসারে ভারতের তিনটি ভাগ জিন্না এবং গান্ধীজী মেনে নেননি।তবে জিন্নাহ তারা আলাদা দেশ হিসেবে পাকিস্তানের স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে অনড় ছিলেন। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ লাহোর লীগের বাৎসরিক অধিবেশনের উপস্থিত সকলের সমর্থনে একটি আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি ওঠে। কারণ জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধী জানতেন যদি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভ করে তবে স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের একমাত্র দাবিদার কিন্তু জহরলাল নেহেরু। তবে সেই অধিবেশনে জিন্নাহ র দাবিকে মেনে নেওয়া হয়নি। যার ফলে ভারতের সাম্প্রদায়িক রক্তস্নান শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর কারণ ছিল একটাই স্বাধীন ভারতের লাগাম কার হাতে থাকবে? মুসলিম লীগ ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, ১৯৪৬ সালের ১৬ ই আগস্ট তারা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস এর ডাক দিয়েছিলেন।তার ফলে কলকাতায় তিনদিন ধরে দাঙ্গা ও হানাহানি চলেছিল। এই দাঙ্গা এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল যা,"দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং"হিসাবে ইতিহাস এর পাতায় জায়গা করে নিয়েছিল। যার ফলে ভারত ভাগ হওয়ার পূর্ণ সমর্থন পাওয়া গিয়েছিল। তবে থেমে থাকেনি ১৯৪৬ সালের অক্টোবরে হিংসা শুরু হল এই হিংসার সবচেয়ে ভয়াবহ শিকার হয়েছিল বাংলা  এবং বিহার।কলকাতায় ভয়াবহ পরিস্থিতির হতে কিছুটা মলম লাগানোর চেষ্টা করেছিল কলেজ স্ট্রিটের বুকে খাসির মাংসের দোকানের মালিক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সক্রিয় সদস্য গোপাল পাঁঠা।তৎকালীন সময়ে গোপাল মুখার্জিকে ওই নামে এক ডাকে সবাই চিনতো। তিনি নারীদের উপর চরম অত্যাচার আর সহ্য করতে পারেননি। তার দলবল নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। শেষমেষ তার রুদ্রমূর্তিতে ভয় পেয়ে স্বয়ং গান্ধীজী ছুটে এসেছিলেন।তাকে তার পায়ে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার জন্য আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি জানিয়েছিলেন,তাকে যদি থামাতে পারে তো একজন ব্যাক্তি সে হলো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এলে তার পায়ে তিনি অস্ত্র সমর্পণ করবেন। এই কথা শুনে গান্ধীজী সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান গ্রহণ করেন। অথচ কলকাতার বুকে যখন একের পর এক হিন্দু নারীদের বেআব্রু করে হত্যা করা হচ্ছিল তখন তিনি চুপ করে মজা দেখছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে মানুষটা সমগ্র কলকাতা কে একটা ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তাকে ইতিহাস সম্মান দেয়নি।তাঁকে আমরা ইতিহাসে পাই না। তার নাম আমরা কজন জানি?

 ১৯৪৮ সালে জানুয়ারিতে একটি সংকট ঘনীভূত হয়।সমস্যা ছিল অর্থ-সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে। ভারত ভাগের সময় ৫০ কোটি টাকা পাকিস্তানকে দেওয়ার কথা উঠলো। কিন্তু বাধ সাধলো বল্লভ ভাই প্যাটেল তিনি পাকিস্তানকে কোনো রকম অর্থ দেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন না। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের গতিবিধি আগেই তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার কথায় আমল দেয়নি জহরলাল নেহেরুর সরকার। যার ফল আজও ভোগ করতে হচ্ছে কাশ্মীরকে নিয়ে। পুনরায় তিনি সুযোগ বুঝেই মত প্রকাশ করেন, যতক্ষণ না পাকিস্তান পুরোপুরি কাশ্মীর থেকে ভোটে যায় ততক্ষণ কোনো রকম অর্থ পাকিস্তানকে দেওয়া যাবে না। এই কথা শুনে গান্ধীজী এক অভাবনীয় আচরণ শুরু করলেন। তিনি পুনরায় অনশন শুরু করলেন। গান্ধীজী কথায় কথায় অনশন করছেন এটা সবার জানা। এবারে তার অনশনের দাবি ছিল পাকিস্তানকে অর্থ দিতেই হবে। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল পিছু হটে এলেন। অর্থ দেয়ার সমস্যা মিটে গেলেই শেষ পর্যন্ত তিনি সমস্ত সম্প্রদায়ের নেতাদের সামনে অনশন ভঙ্গ করলেন।

গান্ধী অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। ১৯২২ সালে যখন তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে পুনের জেলে ছিলেন তখন তাঁর জন্য জেলের মধ্যে দুটি ঘর বরাদ্দ করেছিল চিরশত্রু ইংরেজ। একটি ঘর শোয়ার জন্য, আরেকটি চরকা চালানো ইত্যাদি কাজকর্মের জন্য। তাঁর রোজকার খাদ্য তালিকায় ছিল  ২৫০ গ্রাম আটার রুটি, মাখন,সওয়া এক কিলোগ্রাম ছাগলের দুধ, চারটে কমলা লেবু,দুটো পাতি লেবু,৫০ গ্রাম কিসমিস,খাবার সোডা জেনেও প্রাণ কাঁদে।কি কষ্টেই না থাকতেন তিনি। আর চরকা চালিয়েই তো আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে… তাই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া জাতির জনককে শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

শহীদ ভগত সিং কে ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানোর সময় “অহিংসা পরম ধর্ম”- এই কথার প্রবর্তক এবং প্রচারক মহান অহিংসাবাদী নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “বৃটেনের বিনাশের বদলে আমরা আমাদের স্বাধীনতা চাই না”। তিনি আরও বলেছিলেন, “ভগত সিং-এর বন্দনার ফলে দেশের সমূহ ক্ষতিসাধন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ফাঁসী শীঘ্র কার্য্যকর হোক, যাতে ৩০শে মার্চ, করাচীতে কংগ্রেসের আধিবেশনে কোনপ্রকার বাঁধা বিপত্তি না আসে” অর্থাৎ মহাত্মা গান্ধীর কথা অনুসারে তিনি কাউকে ফাঁসী দেওয়া হিংসা বলে গণ্য করতেন না।শহীদ উধম সিং যখন ইংলাণ্ডে জেনারেল ডায়ার-কে হত্যা করেন তখন মহাত্মা গান্ধী তাঁকে পাগল আখ্যা দেন। তাই প্রসিদ্ধ লেখক শ্রীযুক্ত নীরদ চৌধুরী লিখেছেন, – “গান্ধী পৃথিবীর সবথেকে সফল ভণ্ড।” 

আরও একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রীযুক্ত যতীন দাসকে যখন ইংরেজরা আগ্রায় মৃত্যুদণ্ড দেয়, তখন মহাত্মা গান্ধী আগ্রাতে ছিলেন। যখন মহাত্মা গান্ধী-কে উনার পার্থিব শরীরে মালা দিতে বলা হয় তখন উনি স্পষ্টতঃ অনীহা প্রকাশ করেন। অর্থাৎ মহান শহীদ যতীন দাসের দেশের জন্য এই আত্মবলিদান মহাত্মা গান্ধীর বিন্দুমাত্র সহানুভূতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয় নি। অথচ কংগ্রেস এবং মহাত্মা গান্ধী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজ দের সমর্থন করেছিলেন। যতটুকু জানি যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সৈনিক অপর পক্ষের সৈনিককে ভালোবেসে মিষ্টি উপহার দিতে আসে না, সেখানে হিংসার-ই প্রতিফলন ঘটে। আশ্চর্য্য অহিংসাবাদী নেতা ছিলেন আমাদের মহাত্মা গান্ধী।

যখন ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস অধ্যক্ষ পদের নির্বাচনে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং মহাত্মা গান্ধীর মনোনীত প্রার্থী ডঃ পট্টভী সীতারামাইয়া-এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা হয় তখন মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন ডঃ পট্টভী সীতারামাইয়া নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস (অবসর) নেবেন। বলাবাহুল্য নেতাজী বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়ী হন (অবশ্য পরে মহাত্মা গান্ধীর সম্মান রক্ষার্থে তিনি পদত্যাগ করেন)। যদিও আমরা দেখতে পাই যে মহাত্মা গান্ধী আমৃত্যু সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।তদরূপ মহাত্মা গান্ধীর আরও একটি উক্তি ছিল যে, “পাকিস্তান যদি সৃষ্টি হয় তবে সেটা আমার মৃতদেহের উপরে হবে।” যদিও পাকিস্তান তাঁর (মহাত্মা গান্ধীর) পূর্ণ সমর্থনে সৃষ্টি হয়েছিল। কি অসাধারণ সত্যবাদী ছিলেন আমাদের মহাত্মা গান্ধী তাহা পাঠকরাই বিবেচনা করুন।

ক্লেমেন্ট রিচার্ড অ্যাটলী যিনি ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা সিদ্ধান্তের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি ১৯৫৬ সালে একবার ভারত সফরে এসে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল জাস্টিস পি বি চক্রবর্তীর গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়েছিলেন। পি বি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি ক্লেমেন্ট অ্যাটলীকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কী কারণে আপনারা এত দ্রুত ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?’ তিনি আমাকে বলেন, ‘নেতাজির সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মধ্যে ব্রিটিশ রাজের প্রতি বিদ্রোহ দানা বাঁধছে। তারা আর অনুগত থাকছে না।’পি বি চক্রবর্তী জানান, আমি আরও জানতে চাইলাম, ভারত ছাড়ার পেছনে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের ভূমিকা কতটুকু ছিলো?’ অ্যাটলী তখন ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি টেনে বললেন, মি-নি-ম্যা-ল অর্থাৎ (সামান্যই)।যারা নেতাজীর ভয়ে দেশ ছেড়ে পালালো তারা নিজেরাই স্বীকার করছে তারা নেতাজী সুভাষের ভয়ে পালিয়েছে, আর আমরা ৭৬ টা বছর গান্ধীজীর দর্শন নিয়ে মাথা কুটে মরছি।(তথ্য সংগৃহীত)

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(CLOSE) #days=(02)

আলোচনা করুন, আলোচনায় থাকুন। এখানে টাচ করে দেখে নিন, কীভাবে লেখা মেল করবেন। আপনার আলোচনা তুলে ধরুন পাঠকের সামনে।
Accept !