ADVT

পশ্চিমবাংলায় আর কবে শিল্প কারখানার জোয়ার আসবে?


বটু কৃষ্ণ হালদার

ভারত বর্ষ এবং চীন উভয় দেশ জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে। সে দিক থেকে বলতে গেলে যত বেশি জনসংখ্যা,তত বেশি উন্নত মস্তিষ্কের মানুষ, তত বেশি উন্নতশীল দেশ। তবে চীনের ক্ষেত্রে কথাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও ভারতবর্ষে ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। একনায়কতন্ত্র কমিউনিস্ট চীনের মানুষ ১০০ শতাংশ সততার সঙ্গে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে।একটি দেশ চালাতে গেলে কঠোর অনুশাসনের প্রয়োজন হয়,সেই অনুশাসন মানতে বাধ্য করানো হয় চীনে।এই কঠোর নিয়ম আর অনুশাসন চীনকে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয় চীনের জনগণ প্রতি নিয়ত নিজেদেরকে উন্নত  করার চেষ্টায় অবিরত থাকে।দেশের কঠোর অনুশাসন আর দেশের প্রতি জনগণের একনিষ্ঠ আনুগত্যের জন্য চীন বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হিসাবে চিহ্নিত।সে দিক দিয়ে ভারতের অবস্থানটা একবার উপলব্ধি করার চেষ্টা করলেই বোঝা যায় সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলে ও ভারত বর্ষ আজ সে দিক দিয়ে উন্নত দেশগুলো থেকে প্রায় শত যোজন দূরে। ভারতবর্ষের শুধু নামেমাত্র ১৪০ কোটির দেশ, এ দেশের বেশির ভাগ জনগণ আজ ও ভালো মন্দের বিচার করতে পারে না।অন্যান্য উন্নত শীল দেশগুলোতে ও রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করে জনগণ ও দেশের স্বার্থে,কিন্তু ভারতে রাজনীতি হয় দেশের,জনগণের স্বার্থে নয়। আমাদের দেশের ভোট দাতারা না খেতে পেয়ে মরে,আর নেতা-মন্ত্রীরা ঠাণ্ডা ঘরে বসে বসে দেশ বেচে দেওয়ার চক্রান্ত করতে থাকে। দেশে বহু কল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, কেন্দ্রে ও রাজ্যের নিয়ম করে সরকার পরিবর্তন হলেও নতুন কোনো কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়নি কোন সরকার।অথচ গদিতে বসার পর জনগণের টাকায় সমস্ত দেশ ঘুরে বেড়ায়। তবুও নতুন করে আশার আলো দেখাতে পারেনি কোন সরকার।বেকাররা বেকার হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষিত বেকার যুবকদের হতাশা বেড়ে চলেছে।অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খুবই খারাপ।কারণ পশ্চিমবাংলায় শতকরা শিক্ষিতের হার নেহাত কম নয়।কে বুঝবে শিক্ষিত বেকার যুবকদের বুকে যন্ত্রনা?

১৪০ কোটির দেশে বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি। একজন মানুষ যখন তার কর্ম খুঁজে না পায় তখন তাকে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়, সেটা উপলব্ধি করার মত মন বোধহয় আমাদের কারো নেই।করোনা প্রকোপে যেমন বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা, তেমনি বিশ্বেজুড়ে কর্মচ্যুত হয়েছে বহু মানুষ।এই সমস্যা আরো তিন গুণ বেড়ে গেছে সেই আশঙ্কা সত্যি করে ভারতের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএমআই ই জানায় ৩ রা মে শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বেকারত্বের হার ২৭.১০ শতাংশ। লকডাউন শুরুর পরে এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড। লকডাউন শুরুর আগে ভারতে বেকারত্বের হার ছিল ৪.১ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ এর এপ্রিল মাসে সেই বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ২৩.৫২ শতাংশ। সি এম আইইয়ের তথ্যানুসারে এপ্রিল মাসে ভারতের ৯ কোটি ৩০ লাখ দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসার কর্মী,বিভিন্ন উদ্যোগের আরও ১ কোটি ৮২ লাখ কর্মী ও বেতনভুক্ত কর্মীদের ১ কোটি ৭৮ লাখ কাজ হারিয়েছে। যে দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্ম করে সেখানে প্রায় তিন মাস আর্থিক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ থাকার ফলে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে কর্ম হারানোর ছবিটা খুবই ভয়ঙ্কর।আন্তর্জাতিক শ্রম দপ্তর ও এডিবির তথ্যানুসারে তরুণ প্রজন্ম কাজ হারিয়েছে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি। কর্ম হারিয়েছে অভিবাসী শ্রমিকরা, ঠিকা শ্রমিক থেকে শুরু করে, হোটেলের কর্মী,ডেলিভারি বয়রা।আরো খারাপ অবস্থা হয় সমাজের ফুটপাতে বসবাস করা মানুষজন ও ভিখারিদের।বাংলা বাদে ৬ টি রাজ্যে ১১৬ জেলায় যেখানে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক প্রতিটি জেলায় ফিরে গেছে তাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে এই সমস্যা কি মেটানো সম্ভব? শুধু করোনা নয়,যোগ্য সঙ্গ দিয়েছ বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক প্রতিকূল সমস্যা। এতে নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে গাছপালা এমনকি শস্য।আর তাতেই শোচনীয় হয়ে পড়ে কৃষকরা।

এসব সমস্যার সমাধান করতেই একমাত্র উপায় হলো কল কারখানা।একটি কলকারখানা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নানাভাবে রুজি-রুটির সংস্থান হয়ে যায়। কিন্তু কোন সরকার ভাববে সেই কথা? কিন্তু মনে রাখা দরকার যে এই পশ্চিমবঙ্গের বুকে সবথেকে বেশি কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

শিল্প-শিক্ষায় যে রাজ্য এককালে ঈর্ষণীয় উন্নতি করেছিল, ছিল প্রথম সারিতে,সেই রাজ্য ১৯৭৭ থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছরে  করে শিল্প শশ্মানে পরিণত হল। কিন্তু কেন? এর ফলে কর্ম মুখী বাঙ্গালীরা বাংলা ছাড়তে বাধ্য হন।১৯৭৭ সাল থেকেই শুরু হয় লাল ঝান্ডার উত্থান শুরু হয়। তাই সেই সময় কল কারখানা বন্ধের দায় শুধু মাত্র তাদের উপর বর্তায়। কিন্তু এর উত্তরে বামপন্থীরা সাফাই হিসাবে দেবেন সেই বিখ্যাত কেন্দ্রের বঞ্চনা তত্ত্ব।কি সেই কেন্দ্রের বঞ্চনা? সেটি হল,মাশুল সমীকরণ নীতি যার ফলেই নাকি পশ্চিমবঙ্গের কলকারখানা সব ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল।এছাড়াও পুঁজিবাদী আমেরিকার চক্রান্ত তো আছেই।এখন বামপন্থীদের বলুন যে এই মাশুল সমীকরণ নীতিতো লাগু হয়েছিল ১৯৫৬ সাল থেকেই, কিন্তু প্রশ্ন এখানে যে ১৯৫৬ সাল থেকে অসুবিধা হল না আর ১৯৭৭ সাল থেকে জ্যোতি বসুর আমলে একের পর কলকারখানা বন্ধ হল ? তাছাড়া মাশুল সমীকরণ নীতি প্রয়োগ হয়েছিল ইস্পাতের ক্ষেত্রে, কিন্তু এরাজ্যে কিংবদন্তি মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুর আমলে রাবার, ইলেকট্রনিক,মেটাল,কটন মিল, জুট মিল ,এলুমিনিয়াম,খাদ্যসামগ্রী, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং, পেপার মিলস, অটোমোবাইল সহ কাঁচ শিল্প সমস্ত কিছুই বন্ধ হয়ে গেছিল। বাম আমলে ছোট-বড় সবমিলিয়ে প্রায় ৫৮,০০০ কারখানা বন্ধ হয়েছিল চিরতরে।এর কোন সদুত্তর বা উপযুক্ত অজুহাত আছে কি বামপন্থীদের কাছে? 

এই কমিউনিস্ট দের সময়ে শিক্ষিত বেকার দের সাথে সাথে শ্রমিকদের অবস্থা ও করুন হয়ে পড়ে।বাংলার শ্রমিক মেহেনতি মানুষ রা হয়ে পড়ে পরিযায়ী শ্রমিক।এই লক ডাউনে সব থাকে খারাপ পরিস্থিতি মালিক তারাই।সমস্যা যদি গোড়া থেকেই অনুধাবন করতে হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে, বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ গুলো কেন পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হলো?এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে বলতে পারেন? শুধু তাই নয়,১৯৭৭ সালে মূলত শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষদের গণতান্ত্রিক স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েই বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তার তিন থেকে পাঁচ বছর পরেই শ্রমিক দরদী মার্ক্সবাদীদের প্ৰকৃত রূপ ফুটে ওঠে। এ প্রসঙ্গে রন্তিদেব সেনগুপ্তর লেখা বইয়ে গাঢ়লাল ফিকেলাল এ ১৯৮০ থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে বাংলায় বন্ধ হওয়া প্রধান ১৭ টি শিল্পসংস্থা ও তাদের  কর্মীদের অনাহারে ও আত্মহননের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন। তাঁর তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র ওই সাত বছরে ১৭ টি ইন্ডাস্ট্রি ঝাঁপ বন্ধ করার কারণে এরাজ্যে মোট ৯৮২ জন হতভাগ্য শ্রমিক ক্ষিধের জ্বালায় মারা গেছেন নতুবা অভাবের জ্বালায় আত্মহত্যা করেছেন।ওই তাও এটি মাত্র ৭ বছরের তথ্য,সহজেই অনুমান করতে পারেন যে ৩৪ বছরে এই রাজ্যের দরিদ্র শ্রমজীবি মানুষদের কি হয়েছে।শুধু কি অনাহারেই শ্রমিক মরেছিল ? বামফ্রন্টের পুলিশ গৌরীশঙ্কর জুট মিল, তেলেনিপাড়ার ভিক্টোরিয়া জুট মিল এবং ফুলেশ্বরের কানোরিয়া জুট মিলের প্রতিবাদী শ্রমিকদের উপর একাধিকবার অত্যাচারও চালিয়েছিল, লাঠি-গুলি কিছুই বাদ যায়নি।সব ঘটনাই নব্বইয়ের দশকের।মনে করে দেখুন- সে সময় ভিক্টোরিয়া জুট মিলের শ্রমিক ভিখারি পাশোয়ানের অন্তর্ধান নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়েছিল,মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল।বছরের পর বছর এইভাবেই কারখানা বন্ধের ভয়, পুলিশের লাঠির ভয়ে, অনাহারের জ্বালায়, বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতার কাঁটা নিয়ে এরাজ্যে শ্রমিকরা মরেছে। 

এদিকে শ্রমিক-মেহনতি মানুষরা মরেছে, একের পর এক শিল্পপতি রাজ্য ছেড়েছে, একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে আর মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির শ্রমিক সংগঠন CITU-এর বিলাস বৈভব বেড়েছে! কলকাতায় ও জেলায় জেলায় CITU- এর প্রাসাদোপম অফিস হয়েছে, CITU নেতারা গাড়ি-বাড়ি করেছেন।জলের মত টাকা খরচ হয়েছে CITU- এর রাজ্য ও জেলা সম্মেলনগুলিতে।এই করে করে সমগ্র ভারতে পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি দাঁড়িয়ে গেল কারখানা গেটে বিক্ষোভ, লাল ঝান্ডা, হরতাল, শিল্পসংস্থার মালিক ও ম্যানেজারকে ঘেরাও ইত্যাদি।লাল ভাইরাসে আক্রান্ত দুর্ভাগা রাজ্য থেকে শ্রমিকরাও পরিযায়ী হলেন, শিক্ষিত যুবকরাও পরিযায়ী হলেন। 

এবার আসুন রাজ্যের শিক্ষিত চাকুরিপ্রার্থীদের প্রসঙ্গে। এরাজ্যে কারিগরি শিক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া মানে হয়ে দাঁড়ালো অভিশাপ, অগণিত শিক্ষিত যুবক-যুবতীর সামনে ভিন রাজ্যে চাকরি করা ছাড়া জীবিকা নির্বাহ করা হল অসম্ভব। শুনলে অবাক হবেন নব্বইয়ের দশকে কেন্দ্র সরকার চেয়েছিল বাঙ্গালোর বা হায়দ্রাবাদের পরিবর্তে কলকাতায় IT industry এর গোড়াপত্তন করতে ।কিন্তু ১৯৮৭ সাল থেকেই রাজ্যের বাম নেতারা কিছুতেই রাজ্যে কম্পিউটার ঢুকতে দেবেন না।কারণ ওনাদের মতে কম্পিউটার হল- ' Job eating machine'।

এক বাম নেতা বলেছিলেন- কম্পিউটার হল পুঁজিবাদী আমেরিকার তরুণ-তরুনীদের খেলনা, ওসব এরাজ্যে আনা যাবে না। বর্তমানে দেশ এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞানের কাঁধে ভর করে। অথচ বামপন্থীদের চিন্তা ধারায় রয়ে গেছে বস্তা পচা মানসিকতা।আজকের দিনে ভাবতেও মাথায় ব্যাথা হয়। বলার কোন ভাষা নেই।এরপরেও কিন্তু কমিউনিজমের ফ্যান্টাসিতে সম্মোহিত রোমান্টিক বাঙালী বামপন্থার হয়ে গলা ফুলিয়েছে, তাদের ভোট দিয়েছে, জ্যোতি বসুকে পূজা করেছে।বাঙলার শিল্পের ও বাঙালীদের মানসিকতার যে বিষাক্ত ক্ষত বামফ্রন্ট করে দিয়েছিল, সেই ক্ষত থেকে আজো রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে।

বামপন্থীদের আমলে স্লোগান উঠেছিল"চাষির ছেলে চাষা হবে"। সেই আমলে পার্টির ক্যাডাররা, বলতে গেলে বহু অযোগ্য ব্যক্তিরা ঝান্ডা ধরে চাকরি পেয়েছে। অথচ শিক্ষিত বেকার যুবকরা গলায় সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে আজও ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।সেই ধারণা আজও পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষিত বেকার যুবকদের ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যে কোমায় চলে গেছে। এই মানসিকতা নিয়ে পশ্চিম বাংলার বুকে ৩৪ বছর বুক ফুলিয়ে রাজত্ব করে গেল। একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি, এজন্য দায়ী কারা? আমরা নিজেরাই। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা একবারও ভেবে দেখি নি। তাহলে বোধহয় বহু আগে লাল ঝাণ্ডার কফিনে শেষ পেরেক পোতা হয়ে যেত। শেষমেষ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে টাটার ন্যানো কারখানার হাত ধরে এই পশ্চিমবাংলায় মানুষ কিছুটা আশার আলো দেখলেও, সেই আশার আলোতে জল ঢেলে দেন তৃণমূল কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শিল্প বিরোধী আন্দোলনটা আমরা চোখের সামনে দেখেছি। শিক্ষিত বেকার যুবকদের চোখের তারার স্বপ্ন গুলো অকালেই ঝরে পড়েছিল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরেই শিল্প বিরোধ আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিল লাগাতার। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মাটি রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের বুকে গুলি খেয়ে শিল্প বিরোধী আন্দোলনকে সফল করে তুলতে সক্ষম হন। বহু মানুষ ছট ফট করতে করতে প্রাণ দেন চোখের সামনে। এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবাংলায় লাল ঝান্ডা কফিনবন্দি হয়, আর শেষ হাসি হাসে শিল্প বিরোধী আন্দোলনকারীদের জনদরদী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।অবশেষে বাধ্য হয়ে ন্যানো কারখানার চলে যায় গুজরাটে। চিরতরে পশ্চিমবাংলার কপালে শিল্প-কারখানার ঝাঁপি বন্ধ হয়ে যায়। আর বঙ্গলক্ষী দুয়ারে আসেনি কোন শিল্পের বার্তা।সেই সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিত বেকার যুবকরা অনাথ হয়ে পড়ে।দুঃখের বিষয় তবে সে সময় কোন শিক্ষিত যুবক সম্প্রদায় রা শিল্প বন্ধ না হয়ে যাওয়ার জন্য কোন আন্দোলন করেনি। অথচ বিনা কারণে বহু শিক্ষিত যুবকরা নানান আন্দোলন করে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাপকিন, চুম্বন,আন্দোলন,দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়তে সন্ত্রাসবাদি আফজাল গুরুং এর ফাঁসি রদ করার জন্য আন্দোলন।এ সব ইতিহাস তৈরি হচ্ছে সাধারণ জনগণের চোখের সামনে।এক সময় বসিরহাটে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ নুসরাত জাহান শিক্ষিত বেকার যুবকদের নিয়ে আঙুল তুলেছে প্রধানমন্ত্রীর দিকে।একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু রাজ্যের একজন সাংসদ হিসাবে কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ইতিবৃত্তটা জানা খুব দরকার।এখন যদি সাংসদ নুসরাত জাহান কে প্রশ্ন করা হয় গত ১০ বছরে এই পশ্চিম বাংলার বুকে কতগুলো কারখানা হয়েছে?বা শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য কত কর্মসংস্থান হয়েছে? সাংসদ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন কি?সিপিআইএমের আমলের নিয়মের একটুও পরিবর্তন হয়নি। আগেও চাকরির পরীক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছিল। বর্তমানে এ নিয়মের একটুও পরিবর্তন হয়নি। এসময়ে পার্টির ঝান্ডা ধারী অযোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি পাচ্ছেন। কবে আসবে শিল্প-কারখানার জোয়ার?কবে সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে আসবে স্বচ্ছতা? এমন বহু প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে সাধারণ জনগণ ও শিক্ষিত বেকার যুবকদের মনে। কারণ মানুষ কর্ম পাবে, শিক্ষিত বেকার যুবকরা তাদের শিক্ষার মূল্য পাবে, বাংলার জনগন দুর্নীতির বেড়া ডিঙিয়ে মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে,এই ভেবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে পশ্চিমবাংলার বুক থেকে চিরতরে নির্মূল করে দেয় লাল ঝান্ডা কে। কিন্তু প্রশ্ন, তৃণমূল কংগ্রেস কি জনগণের সেই আশা পূরণ করতে পেরেছে? তবে সংসদ নুসরাত জাহানের মনে রাখা দরকার এই পশ্চিম বাংলার বুকে কল কারাখানা আনার দায়িত্ব কিন্তু রাজ্য সরকারের। সেই আশা যদি পূরণ না হয় সাধারণ জনগণ কিন্তু লাল ঝাণ্ডার মত তৃণমূলকে চিরতরে ছুঁড়ে ফেলবে পচা নর্দমায়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

#buttons=(CLOSE) #days=(02)

আলোচনা করুন, আলোচনায় থাকুন। এখানে টাচ করে দেখে নিন, কীভাবে লেখা মেল করবেন। আপনার আলোচনা তুলে ধরুন পাঠকের সামনে।
Accept !