আজ বাঙালি যাচ্ছে বলে আপন পথে চলতে/আজ বাঙালি যাচ্ছে ভুলে আপন কথা বলতে/আজ বাঙালি যাচ্ছে হয়ে অন্য ভাষার দাস/বাংলা ভাষায় বললে কথা পড়বে তোমার লাশ।"বাঙালি ফিরে আসুক স্ব_ মহিমায়। নিজের ভাষা সংস্কৃতিকে বুকে জড়িয়ে ধরুক।বাঙালি আবার প্রতিবাদী হয়ে উঠুক।হিন্দি সিনেমা নয় বাংলা সিনেমার নেশা জড়িয়ে ধরুক শরীরে।একে অপরের মধ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলা প্র্যাকটিস করুন। সন্তানদের বাংলা কার্টুন চ্যানেল দেখানো অভ্যাস করুন। নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগুলো পালন করার চেষ্টা করুন।বেশি বেশি করে বাংলা সাহিত্য অনুষ্ঠান করুন। কারণ অন্যান্য রাজ্যের মানুষ পশ্চিমবাংলা রাজ্য থেকে ভবিষ্যৎ গড়ে নিয়ে চলে যাবে। আর বাংলা ভাষার পিঠস্থান এবং বাঙালিরা ভিক্ষুক ও পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হবে আগামী ভবিষ্যতে তা বলা বাহুল্য।
এক শ্রেণীর দেশপ্রেমিকদের তাজা তাজা রক্তের বিনিময়ে দেশ তো স্বাধীনতা লাভ করল, কিন্তু কাদের লাভ হয়েছে আমরা একবার ভেবে দেখেছি কেউ?লাভ হয়েছিল মুসলিমদের,কারণ তারা তাদের হিসেব বুঝে নিয়েছিল। বলা যায় স্বাধীনতা য় অংশ গ্রহণের ফল স্বরূপ তারা তাদের প্রাপ্য বুঝে নিয়েছিল,তাও আবার দেশ বাসীর রক্ত ঝরিয়ে।মুসলিমদের জন্য আলাদা দেশ গঠন হয়েছে।অথচ বাংলায় বাঙালিরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ত্রাস হয়ে উঠেছিল, আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল,যে বাঙ্গালীদের হাত ধরে সমগ্র ভারতবাসী স্বাধীনতা লাভের স্বপ্ন দেখেছিল,
সেই হিন্দু বাঙ্গালীরা কি পেয়েছে? ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহান পুরোধা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হারিয়ে যাওয়ার পর বাঙালিরা পেয়েছে শুধুমাত্র বঞ্চনা,অবহেলা,আর চোখের জল। শুধু তাই নয়, পরিযায়ী শ্রমিকের পরিসংখ্যানটা একটু জানার চেষ্টা করুন দেখবেন সবথেকে বেশি বাঙালি হিন্দুরা আজ পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হয়েছে।কিন্তু কেন? তার উত্তর খুঁজতে গেলে আঙ্গুল তুলতে হবে নিজেদের উপর।তাহলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
চোখের সামনে মুসলিমদের প্রাধান্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম দেওয়া হলো, আর ভারতের ক্ষেত্র হলো ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।ধর্মগুরুর দেশে সংখ্যালঘুদের জন্য কোন নিরাপত্তা নেই, কোন সুযোগ সুবিধা নেই, অথচ ভারতের সংবিধান সবার জন্য সমান হয়ে গেলো।বৈদেশিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু মুসলিম রাষ্ট্রে বাঙালি হিন্দুদের জন্য কোন নিয়ম,নিরাপত্তা নেই। বর্তমানে বাংলার রাজনৈতিক চরিত্র বাঙালি হিন্দু বিদ্বেষী ও মুসলিম শ্রেণী, বহিরাগত অ _বাঙালি তোষামোদকারী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলায় ভূমিপুত্র সংরক্ষণ না হওয়ার ফলে বহিরাগতরা পশ্চিমবাংলার চাকরি, শিক্ষা দীক্ষা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য জায়গায় নিজেদের আরিফত্য বিস্তার করেছে যার ফলে পশ্চিমবাংলার আদি অধিবাসী বাঙালিরা পরিযায়ী শ্রমিককে পরিণত হয়েছে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। যে রাষ্ট্রে যে ভাষা-ভাষীর মানুষ বেশি বসবাস করে সেই রাষ্ট্র সেই ভাষার ভূমিপুত্রদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। যেমন মহারাষ্ট্র শিব সেনা সরকার ৮০ শতাংশ, গুজরাট ৮০ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৭০ শতাংশ, অন্ধপ্রদেশের সরকারি-বেসরকারি সব চাইতে ৭৫ শতাংশ, এমনকি হরিয়ানা,রাজস্থান,কর্ণাটক,গোয়া,বিহার, সরকার স্থানীয় দের জন্য সংরক্ষণ করলেও পশ্চিমবাংলায় বাঙ্গালীদের জন্য কোন সংরক্ষণ নেই। এরমধ্যে এমন বহু রাজ্য আছে যারা আজও জাতপাত ভেদাভেদহীন গণ্ডির বাইরে আজও আসতে পারেনি। তবে তারা নিজেদের যাদের জন্য লড়াই করে নিজের রাজ্যে অস্তিত্ব টিকিয়ে নেওয়ার লড়াইতে জয়ী হয়েছে। গুজরাটে গুজরাটি, কেরালা মালায়ালাম শিক্ষা হবে বাধ্যতামূলক। অথচ বাংলার পিঠস্থান পশ্চিমবাংলায় বাঙালিরা আজও এসব থেকে শত যোজন দূরে। পশ্চিমবাংলায়় বাংলা বাংলা ভাষা না থাকলেও চলে যাবে। এই বাংলা বাদ দিয়ে আপনি যে রাজ্যে যাবেন সেখানে সেই রাজ্যের ভাষা আপনাকে জানতে হবে, তবে আপনি কাজ পাবেন। অথচ পশ্চিম বাংলার বুকে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক নয় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে। তাই হিন্দি উর্দু ভাষাভাষীরা এই রাজ্যে এসে বাঙ্গালীদের কর্মক্ষেত্র গুলো দখল করে নিচ্ছে।এখানে বাংলা না জানলেও আপনি সরকারি চাকরি পাবেন। এমনকি বিহার বোর্ড থেকে পাস করে এসে এই বাংলায় শিক্ষকতার চাকরি করছে।
তা না হলে বাংলা ভাষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ চেয়ে রাজেশ,অরুণ, তরুণ দের গুলি খেয়ে মরতে হয়। সে জন্য বাঙালিরা হয়ে যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক।পশ্চিমবাংলায় যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত রাজ্যের ডোমিসাইল ব্যবস্থা আছে।ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ও বাইরে থেকে অ_ বাঙালি রা সিট দখল করে নিচ্ছে। আর পশ্চিম বাংলার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেলেরা আজ প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করছে। তার উপর আছে, বাহিরা গত অশিক্ষিতদের ভিড়। দেশের অন্যান্য রাজ্যতে ঠাঁই না হলে ও এই বাংলায় তাদের স_ সম্মানে জায়গা করে দিয়ে খাল কেটে কুমির ঠুকিয়ে বসে আছে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দল গুলো। এরা হাতে পায়ে ধরে চাকরি পেয়ে যায়। আর বাইরের বেড়াল বাংলার বুকে বাঘ হয়ে জীবন যাপন করছে। আর স্থানীয় বাঙালিরা হয়ে যাচ্ছে ঘরের বেড়াল। বাংলার লজ্জা।আপামর বাঙালির লজ্জা। এই সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি।বাঙালিরা নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের সাথেই আপোষ করে যাচ্ছে। যেসব নেতা-মন্ত্রীরা আপনার ঘরে খাল কেটে কুমির ঢুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানরা কিন্তু বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করে না। তাদের চাকরি না করলেও চলে যাবে কিন্তু আপনার অবস্থা কি হবে ভেবে দেখেছেন? এখনো যদি না ভাবতে পারেন তাহলে নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভাবা প্র্যাকটিস করুন নইলে পস্তাতে হবে।
শুধু তাই নয় এই বাংলায় আজ জাত, ধর্মের রাজনীতি চলছে। বেছে বেছে বিশেষ শ্রেণী মানে মুসলিম, মতুয়া তোষণ রাজনীতি চলছে। রাজনীতির স্বার্থে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দল গুলি এক বার মুসলিমদের, একবার মতুয়াদের পায়ে তেল দিয়ে চলেছে।তারা সব সুবিধা পাচ্ছে। আচ্ছা ভেবে দেখেছেন বাঙালি হিন্দুরা আপনারা কি পাচ্ছেন? বাঙালি বিভাজনের রাজনীতিতে শুধু বাঙালিরা আজ গুলি খেয়ে মরছে। আর এই বিভাজনের খেলায় সুযোগ নিচ্ছে মতুয়া, মুসলিম রা। তবু মুসলিমরা স্বাধীনতায় অংশ গ্রহণ করেছিল,কিন্তু মতুয়া কারা?দেশের প্রতি এদের কি অবদান আছে?তবুও সব সুযোগ ভোগ করছে শুধু তাদের জাতিতে বিভাজন নেই বলে। স্বাধীনতায় বাঙালি ফাঁসি কাঠে ঝুলেছে,খুন হয়েছে,দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে, দেশের সব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এখন ও রাজনীতির বলি হচ্ছে তবু ও এদের চোখে কালো চশমা। বুঝে ও না বোঝার ভান করে চলেছে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া লাগলে বাইরে থেকে লোক তো সুযোগ নেবে। আর সেটাই চলছে এই বাংলায়। তাই বাঙালি আর নয়, একে অপরের হাত শক্ত করে ধরুন, সমান তালে পা মিলিয়ে চলুন,একই সুরে কথা বলুন, একে অপরের পাশে দাঁড়ান, তাহলে দেখবেন রাজনৈতিক দল গুলো আপনার পিছনে ছুটছে। তাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। নইলে বাঙালি আপনি মোমবাতির মত শুধু আলো দিয়ে যাবেন,কিন্তু কদর পাবেন না।ভাবুন বাঙালি, শুধু ভাবুন, কারণ ভাবতে সরকার কে tax দিতে হয় না। শীত ঘুম থেকে বেরিয়ে আসুন।নইলে একদিন এই বাংলা থেকে আপনি শুধু বঞ্চিত নন, বিতাড়িত বা শরণার্থী হয়ে যাবেন। এর পর ভাবুন আপনি কি চাইছেন বিভাজন,না বাঙালি ঐক্য?কারণ আপনার এই চিন্তা ঠিক করে দেবে আপনার এবং আপনার সন্তানের ভবিষ্যত।