Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

মহালয়া তিথির দিন 'শুভ মহালয়া' বলা যাবে


রূপম চক্রবর্ত্তী
(সনাতন ধর্মীয় বক্তা, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট)

পণ্ডিতদের মতে, পঞ্জিকায় কোনও দিনকেই আলাদা করে 'শুভ' বলা নেই। বিবাহ, অন্নপ্রাশনের মতো বিভিন্ন শুভকর্মের জন্য নির্দিষ্ট দিন বা সময়ের উল্লেখ থাকে। কিন্তু কোথাও শুভ দুর্গাপুজা, শুভ কালীপুজা ইত্যাদি বলা হয় না। তাই যে ভাবে শুভ বিবাহ, শুভ অন্নপ্রাশন বলা হয় সে ভাবেই লোকমুখে প্রচলিত হয়েছে শুভ দুর্গাপুজা, শুভ দীপাবলি বা শুভ মহালয়া। এগুলির কোনওটিই শাস্ত্রে বলা বিশ্লেষণ নয়। লৌকিক ব্যবহারে বিশেষ বিশেষ দিন বা উৎসবের আগে 'শুভ' শব্দ প্রয়োগ করা হতে পারে। এর সঙ্গে শাস্ত্রের বিধির যোগ খোঁজা ভুল। প্রশ্ন এসেছে মহালয়ার আগে শুভ যোগ করা যাবে কিনা। আমি নিঃসন্দেহে বলতে চাই আমরা যেভাবে শুভ দীপাবলি বলি ঠিক সেভাবে শুভ মহালয়া বলা যাবে। সনাতন ধর্মে বলা হয়- কোন শুভ কাজ করতে গেলে, যেমন- বিবাহ করতে গেলে প্রয়াত পূর্ব পুরুষদের সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়।  এক্ষেত্রে তর্পণ মানে খুশি করা । ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এমনটাই করেছিলেন । সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করেন, পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন । পণ্ডিত সতীনাথ পঞ্চতীর্থ বলেছেন, 'মহালয়ায় যে তর্পণ করা হয়, তা শুধুই পিতৃপুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেদিন দেব তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য-পিতৃ তর্পণ করতে হয়। সঙ্গে থাকে রাম তর্পণ ও লক্ষ্মণ তর্পণ। সেখানে ত্রিভুবনে সমস্ত প্রয়াতকে জলদানের মাধ্যমে তৃপ্ত করার কথা বলা আছে। এমনকি তাঁদের উদ্দেশ্য তর্পণও করা হয়, জন্ম-জন্মান্তরে যাঁদের আত্মীয়-বন্ধু কেউ কোথাও নেই। এই ভাবে যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আত্মীয়- অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সকল প্রয়াতকে জলদান করে তাঁদের আত্মার তৃপ্তি সাধন করা হয়, তাহলে সেই দিনকে অশুভ বলে ভাবা হবে কেন?' হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও খাদ্যলাভের আশায়। প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-খাদ্য প্রদান করে তাঁদের 'তৃপ্ত' করা হয় বলেই মহালয়া একটি পুণ্য তিথি। ভারতকোষ গ্রন্থে চিন্তাহরণ চক্রবর্তী মহালয়াকে 'পিতৃপুরুষের উৎসবের আধার' বলে বর্ণনা করেছন। মহৎ আলয় থেকে মহালয়ার উৎপত্তি। বলা হয়, পিতৃপুরুষেরা এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়। কোনও কোনও শাস্ত্রজ্ঞের অভিমত, প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-পিণ্ড প্রদান করে তাঁদের 'তৃপ্ত' করা হলে সেই কাজ বা দিনকে 'অশুভ' বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। আর তাই পুণ্য তিথি বলেই মহালয়াকে 'শুভ' বলা যায়। আবার অন্যদিকে এ দিন থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মহালয়া। পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়। আর এই শুভ শক্তিকে জাগ্রত করার জন্য মহালয়া তিথিতেই মায়ের আগমন। মহালয়ার দিনেই মায়ের চক্ষুদান করা হয়। এতগুলো মংগল কাজ যে তিথিতে হয় সে তিথি অবশ্যই শুভ মহালয়া। পবিত্র মহালয়া তিথি শুভ শক্তি, শুভ চেতনা নিয়ে আসুক সকলের মনে এটাই কাম্য।
ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon