পাভেল আমান
"ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে কিন্তু আমার ভাবনাকে মারতে পারে না"। – স্পষ্টটি বেশ সতর্কতা দিয়ে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত।এই বাণীর মধ্যে দিয়ে এক দৃঢ়বৈপ্লবিক নির্ভীক চেতনার সীমানা পাওয়া যায়। এই কথার মধ্যে লুকিয়ে ছিল স্বাধীনতার অদম্য স্পৃহা দেশ মাতৃকার প্রতি উৎসর্গকৃত মনোভাব। সেই চিরস্মরণীয় বেদ মন্ত্রটির বক্তা ছিলেন স্বাধীনের বিপ্লবী ভগৎ সিং। তিনি ছিলেন একজন ভারতের আপসহীন স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী দেশ প্রেমিক। তার জীবনের একটাই লক্ষ্য ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের মুক্তি। ১৯০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেছিলেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামী। ২৩শে মার্চ, ১৯৩১-এ শহিদ হন তিনি। মাত্র ২৪ বছরের জীবনকালেই তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন পুরোধা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রভাবশালী বিপ্লবী। তাঁকে শহিদ-ই আজম ভগত সিংহ নামে অভিহিত করা হয়।লালা লাজপত রায়ের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন ভগৎ সিং। ইংরেজ পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট মিস্টার স্যান্ডার্সকে গুলি করে মারেন। সেই অপরাধে জেলে যেতে হয় ভগৎ সিংকে। পরাধীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আকাশে ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন শহীদ ই আজম ভগৎ সিং। পাঞ্জাবের অকুতোভয় বিপ্লবী শহীদ সর্দার অজিত সিং-এর ভাইপো সর্দার ভগৎ সিং দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন কৈশোরেই। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল বর্ধমানের তরুণ বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তকে সাথে নিয়ে দিল্লী অ্যাসেম্বিলি হাউসে 'শব্দ বোমা'র বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উপনিবেশিক শাসকদের মধ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন ভগৎ সিং। কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, পরাধীন দেশবাসীর ঘুম ভাঙাতে এবং বধির বৃটিশ শাসকদের কর্ণকুহরে স্বাধীনতার দাবি পৌঁছে দিতে দিল্লী অ্যাসেম্বিলি হাউসে বোমাবিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিলো। বিপ্লবী যতিন দাসের বানানো সে বিশেষ বোমায় সেদিন কেউ হতাহত না হলেও, আলোড়িত হয়েছিলো গোটা ভারতবর্ষ। প্রচণ্ড শব্দে বোমা বিস্ফোরণের পর নিজেদের দাবিসম্বলিত লিফলেট ছড়িয়ে দিয়ে এবং হাতের পিস্তল ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত। উদ্দেশ্য ছিলো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দাবি উচ্চারণ করা। আদালতে দাঁড়িয়ে ভগৎ সিং অসীম সাহসিকতায় সে কাজটা করেছিলেন। বিচারে তাঁদের যাবজ্জীবন দিপান্তরের সাজা হয়েছিলো।তাঁর দৃষ্টান্ত ভারতীয় যুবসমাজকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলেন নতুন গতিপথ এনেছিলেন তিনি। ভগৎ সিং-এর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের আদর্শ ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করে, এই জন্য তিনি স্মরণীয়।
আজকের চারিদিকে যখন বিদ্বেষ বিভাজন সাম্প্রদায়িকতা এই মুহূর্তেই বিপ্লবী ভগৎ সিং এর আদর্শ মূল্যবোধ জীবন দর্শন আমাদের প্রত্যেকের কাছেই দেশাত্মবোধ জাগরনের অনুপ্রেরণার চর্চিত বিষয় হয়ে উঠুক।