বটুকৃষ্ণ হালদার
"মা, গো _স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী/এই বোঝা কি আমি বইতে পারি? আজ বোধ হয় এর উত্তর কোনো মায়ের কাছে নেই।সত্যি বই এর বোঝা বইতে বইতে শিশুরা হারিয়ে ফেলেছে স্বপ্নের শৈশব।উড়ন্ত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে হারিয়ে গেছে আমাদের শৈশব।সময় চলছে দ্রুত গতিতে, উন্নত থেকে উন্নত তর হওয়ার প্রতিযোগিতার লড়াই প্রতিনিয়ত মানব জীবন কে গ্রাস করেছে।সময় কিনে নেবার প্রস্তুতি ঘরে ঘরে। প্রতি নিয়ত এক নতুন যুদ্ধের দামামা বাজছে প্রান্তের প্রতিটি কোনায়। স্তরে স্তরে সাজানো প্রতিটি সকাল থেকে রাত।মাশ রুমের মত গজিয়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলো নিজেদের সেই মহড়ায় সাজিয়ে গুছিয়ে শান দিয়ে নিচ্ছে রুটিন মাফিক। একে অপরকে পিছনে ফেলে উপরের সিড়ি বেয়ে চাঁদে ওঠারপরিকল্পনায় ব্যস্ত সবাই।ফলে পিঠে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে স্কুল বাসের জন্যে সেই কাক ভোরে শিশু দের স্কুলের জন্যে তৈরি করা হয়।ভোরের সূর্য কিংবা দিনন্ত শেষের সোনালী লাল রঙের সূর্যাস্ত তাদের কাছে ঝলসানো রুটির মত মনে হয়।কবির কবিতা আজ গদ্য তে রূপান্তরিত হয়েছে নান্দনিক জীবনে। ক্লাস রুমের জানাল দিয়ে চুরি করা সময়ের ফাঁকে ফাঁকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওই নীলভ দিগন্ত এর দিকে,নয় তো দূরের প্রান্তে কোনো বড় গাছের দিকে যার ডালে বসে পাখিরা আপন মনে হচ্ছে মতই খেলা করে ঘুরে বেড়ায়।তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবে ইস আমি ও যদি ওই পাখিদের মত সারা দিন বাঁধন হারl র মতো ঘুরে বেড়াতে পারতাম কি মজা না হত।বাড়ি ফেরার পথে বড় রাস্তার ধারে মাঠে খেলা করা শিশু গুলোর মত আমি ও যদি খেলতে পারতাম। জীবনের রঙিন স্বপ্নটা কেমন ফিকে হয়ে যাচ্ছে নিয়মের গণ্ডি শিখরে আবদ্ধ শিশু দের হৃদয়ে।খেলার মাঠ আজ সিন্ডিকেট ব্যবসা জেরে কংক্রিটের জঙ্গলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তার সাথে ঠিক তেমনই স্বেচ্ছা মৃত্যু হচ্ছে ছোটদের বাস্তব রঙিন শৈশব গুলি।
যদি খেলাধুলা, হাসি মজায়, ছুটির দিন গুলি কাটত রেডিওতে গল্প দাদুর আসর শুনতে শুনতে _তবে কেমন হতো বলত,যদি গ্রীষ্মের দুপুরে মা, ঠাকুমা, ঠাকুরর্দার পাশে শুয়ে শুয়ে রূপ কথার গল্প শুনতে শুনতে চোখ বুজে আসতো,....না সেই সব দিন আর হয় তো নেই।
না আছে মুখের গল্প, না আছে গল্প দাদুর আসর নিয়ে মাতা মাতি।এইসব ছেড়ে আজ শিশুরl মোবাইল, ল্যাপটপ.,কম্পিউটার নিয়ে গেম খেলতে খেলতে চোখের চশমা আজ তাদের নিত্য সঙ্গী।এইগুলো আজ তাদের জীবনের নিদারুণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রূপে পরিগণিত হয়েছে।এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় আর হয় তো নেই।
জীবনের রঙিন স্মৃতি গুলি হারাতে হারাতে যেমন হারিয়েছে শৈশব ঠিক তেমনই হারিয়েছে সেই হারানো ধুলো মাখা দিন দুপুর।বুকের মাঝে আজও রঙিন শৈশব ডাকে আয়, আয়।হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার অনেক খেলা ধুলা। ই চিং, বিচিং, হা - ডু - ডু, মার্বেল, লাটিম, কুতকুত, চাম গুলতি, নারকেল পাতার গাড়ি, চোর - পুলিশ, কানা মাছি- ভো ভো যাকে পাবি তাকে ছো, দাড়ি লাফ, টায়ার দৌড়, বিংয়ারিং গাড়ি এই সব খেলা গুলি র মধ্যে দিয়ে শৈশব আঁচড় দিয়ে যায়।দোকান পাঠ, চড়ুই ভাতি, বাঁদর ঝোলা, মাটির পুতুল তৈরি করে বর_কণে, লুকোচুরি, ঘুড়ি, স্কুল ফাঁকি দিয়ে জল কাদায় ফুটবল খেলতে গিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে কান মো লা খাওয়া,ডাঙ গুলি, দল বেঁধে কাদা জলে মাছ ধরতে যাওয়া ও তখন খেলার মধ্যে কত আনন্দ ছিল, ছিল প্রাণের পরশ অনাবিল সুখের অনুভূতি। পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে দেখতে জীবন কে অন্য ভাগে ভাগ করে নেয়া যেতো।
বর্তমান সময়ে বাস্তব আজ কঠিন প্রশ্নের মুখে সম্মুখীন, কিন্তু উত্তর আজ বোবা হয়ে ঘুরে বেড়ায় সভ্য সমাজের আনছে কানাচে।কবির ভাষায় "ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর ই
অন্তরে" অতি সত্য আজ যারা শিশু তারাই আগামীর ভবিষ্যৎ, তারা আগামীর পথ প্রদর্শক,
পিতা।কিন্তু এই আগামীর বার্তা বাহদের জীবন আজ গণ্ডি শিখরে বাঁধা।অন্ত দেশীয় রাজ নৈতিক ও ধর্মিয় দলl দলি তে সিরিয়া, মিশর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মায়ানমার, বাংলাদেশ তথা ভারতে আগামীর বার্তা বাহক শিশুরা আজ নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে ভুগতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মৃত শিশুদের রক্তে হোলি খেলা চলেছে সর্বত্র।কবে বন্ধ হবে এই নোংরা খেলা? কবে মানব প্রেমের বার্তা বয়ে যাবে এই কলুষিত সমাজ চিত্রে?
"পেটের ক্ষুধা শোনে না ধর্মের বাণী",তা আজ বড় সত্য।জীবন বাঁচাতে শিশুরা আজ শিশু শ্রমি কে পরিণত হয়েছে এটা মিথ্যা নয়। শৈশব কেড়ে নিয়েছে বাবুর বাড়ি,গ্যারেজ, চায়ের দোকান, হোটেল, কারখানা,ইট ভাটাসহ বহু কলকারখানা।এত সস্তায় এই শিশু দের শ্রম ছাড়া আর কি মিলতে পারে? আমরা সবাই জানি শিশুদের কাজ করানো সংবিধান নিষিদ্ধ, তবুও এদের মত সস্তার শ্রমিক আর কারা আছে? সারা দিন পরিশ্রম করার পর বেতন তো দূরের কথা দু - মুঠো অন্ন ও ঠিক মতো দেয়া হয় না এদেরকে।
যারা সমাজে মুখোশ পরে আছে, বড় বড় ভাষণ দেয় তারাই এই সস্তায় শিশুদের পরিশ্রম কেনা বেচারা হাট বাজারে শিশু দের ভাগ্য নির্ধারণ করে।ভাবতে খুব অবাক লাগে তাই না খারাপ সময়ের মুল্য চুকাতে হয় এই ভাবে। "যে বিশ্বকে শিশুর বাস যোগ্য করে যাবার অঙ্গীকার আজ মিথ্যায় পরিণত হয়েছে"।সভ্য সমাজে শৈশব চুরি করে সস্তায় শ্রম কেনার অঙ্গীকার বদ্ধ চুক্তি পত্রে সবাই সই করে বসে আছি।যেমন দেশের রক্ষা কর্তারা ভাবেন না তেমনই সমাজ ব্যবস্থা ও যে খুব চিন্তা শীল তা গ্রহণ যোগ্য নয়। মাঝে মাঝে শিশু চুরির খবর প্রায় প্রকাশ্যে আসে তা নিতান্তই কম নয়। তাদের চুরি করে বেঁচে দেয়া হয় এবং সেই সব শিশু কন্যারা সমাজের নিষ্ঠুর পরিহাসে অস্পৃশ্য ও অশুচির জীবন যাপন করে পতিতা লয়ের লাল আলোর কুঠুরিতে।এ যেন এক নিষ্ঠুর পরিহাস বিধাতার। এ যে আমাদের সমাজের এক চরম লজ্জা, অভিশাপ। কঠোর আইন ব্যবস্থার রূপকার আজও হয় নি। তেমনই আইন রয়ে গেছে সংবিধানের পাতায় আবদ্ধ।রাষ্ট্র সংঘ শিশু শ্রম বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করলে ও তা বাস্তবায়ন হয় নি আজও।
ইতি মধ্যে আরও এক মহাব্যাধি সমগ্র দেশ কে গ্রাস করেছে তা হলো যৌন নিগ্রহ।শিশুরা আজ প্রতি পদে পদে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মহাঅষ্টমীতে আমরা কুমারী পুজো করি।কুমারী তো দূরের কথা তিন - চার মাসের শিশু থেকে শুরু করে ষাট ঊর্ধ্ব নারী আজ ধর্ষণের শিকার সমাজে। কোথায় মানবিকতা? পাল্টেছে মানচিত্র, শহর গ্রামের র