Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

নাটাই চন্ডীর ব্রত

শুভঙ্কর রায়

ব্রতের সংজ্ঞায় বলা যায় যে কোন অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য কায় মনোবাক্যে যে কৃত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়, তাই হলো ব্রত। এই বিশাল ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন ধর্মের ও বিভিন্ন ভাষা-ভাষীর মানুষজন বাস করেন। প্রত্যেকেরই নিজস্ব আচার-আচরণ, ব্রত পার্বণ আছে । ' যার মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যাক্তি জীবনে সুখ শান্তির কামনা করেন। সেই রকমই দক্ষিণ দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের মানুষের রয়েছে নানা ব্রত - পার্বণ। তারই একটি ব্রতের নাম নাটায় চন্ডী ব্রত। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার এই ব্রত পালন করা হয়। নাটাই চন্ডী ব্রত পালনের মাধ্যমে সাংসারিক জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি থেকে মুক্তি লাভ হয়ে থাকে এই ধারণা চিরকাল মানুষের মনে বিরাজ করছে। তাই গ্রামাঞ্চলে আজও নাটাই চন্ডীর ব্রত-পুজা হয়ে চলেছে সাড়ম্বরে।

অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবার  ব্রত পালন হয়ে থাকে কোন না কোন বাড়িতে । তবে প্রতি বাড়িতে অন্তত দুই রবিবার এই ব্রত পালন করা হয়। এই ব্রত পালনে কোনো পুরোহিত বা অধিকারী প্রয়োজন হয় না। গৃহস্থ বাড়ির গৃহিণী ও ছোট ছেলে-মেয়েরা এই ব্রত পূজা সম্পন্ন করে থাকে। ব্রত পূজার উপকরণের মধ্যে ধান,দূর্বা, তুলসি,সিঁদুর,কচুপাতা বা ভেরেন্ডা পাতা,নাটাই (কচুরী) পানা, ছোট শামুক,সরষে ফুল, চালের গুড়ো, গুড়-সন্দেশ বা বাতাসা , পিঠা। সকাল থেকে এই সমস্ত উপকরণ জোগাড় করে রাখে। বিকেল থেকে পুজোর জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। মূলত সন্ধ্যেবেলা হয় এই ব্রত উৎসব পালন। তুলসী তলায় ছোট পুকুর খনন করে তার মধ্যে জল, কচুরিপানা,শামুক দেওয়া হয়। পুকুরের সামনে সিঁদুর দ্বারা প্রতীকী পুত্তলিকা আঁকতে হয়। এছাড়া একটি ছোট বেদী করা হয় তাতে চালের গুঁড়ো ও সর্ষেফুল দেওয়া হয়। পুজোরপূজোর প্রসাদ পিঠা।কপালী সমাজে একে চাপরি পিঠা বলা হয়। এই পিঠা দুই রকমের তৈরি করা হয়। এক নুন ছাড়া ও স্বাদমতো নুন দিয়ে। দুই রকমের পিঠা কচু পাতা বা ভেরেন্ডা পাতার মধ্যে প্রসাদ করে রাখা হয়। গৃহস্থ বাড়ির গৃহিণী নাটাই চন্ডী ঠাকুরকে পুজা দেন এবং পুজা শেষে নাটাই চন্ডীর ব্রতকথা শোনান ছেলে-মেয়েদের। শুধু বাড়ির ছেলে মেয়েরা নয়, প্রতিবেশি ছেলেমেয়েরা অংশগ্রহণ করে। ব্রতকথা শেষে প্রসাদ বিতরণ হয়।

একধনাঢ্য সওদাগরের মাতৃহারা দুই ছেলে-মেয়ে সৎ মায়ের অত্যাচার ও চক্রান্তের হাত থেকে কিভাবে নাটাই চন্ডীর ব্রত পালন করে তাদের দুঃখ দূর হয়। সেই কথা ব্রত পালনের সময় শোনান।


ব্রত কথা শেষ হলে ভেরেন্ডা পাতা বা কচু পাতায় দেওয়া প্রসাদ ছেলে-মেয়েরা কাড়াকাড়ি করে যে যার মত নেয়। শেষে ব্রত পালনকারী গৃহিণী সবাইকে পিঠা প্রসাদ দেন। নুন ছাড়া বা নুন দেওয়া পিঠা প্রসাদ নিয়ে এক জনশ্রুতি আছে, নুন ছাড়া পিঠা প্রসাদ পেলে তার সময় ভালো নয়, আর নুন দেওয়া প্রাসাদ পেলে তার সময় ভালো চলছে সেই নির্দেশ করে ।

যাইহোক বর্তমানেও গ্রামে গঞ্জে নাটাই চন্ডী ব্রত পালন হলেও ব্রত কথা কাউকে বলতে দেখা যায় না। ছেলে মেয়েদের মধ্যেও কাড়াকাড়ি করে প্রসাদ নেওয়ার প্রবণতাও নেই। আজ থেকে দুই দশক আগেও এই দৃশ্য দেখা যেত। এমনকি পাটকাঠিতে পিঠা গেঁথে বাড়ি বাড়ি পিঠা তোলার জন্য ছেলে মেয়েদের দল বেঁধে যেতে দেখা যেত। এসব এখন অতীত। আবু দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা লোকবিশ্বাস, সুখ শান্তি কামনা বা অভিষ্ঠ সিদ্ধির জন্য ব্রত - পূজা- পার্বণ পালন হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে তা ভাবনার অতীত।
ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon